Logoশরয়ী সমাধান
Cover image

প্রবন্ধ

সরকারি চাকরির বিধানঃ ৩য় পর্ব

Hm Sulayman

১৫ মে, ২০২৫

পার্লামেন্ট সদস্য, বিচারপতি পদে চাকুরি করাঃ গত পর্বে আমরা ডিফেন্স ফোর্স নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। মনে রাখা দরকারঃ আমাদের আলোচনার কিছু মূলনীতি আছে। গতপর্বেও মূলনীতি আলোচনা করেছি। বোঝার সুবিধার্থে আবারো এখানে বলছি। মূলত সরকারি চাকুরির তিনটি পর্যায় হতে পারে। (১) তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। (২) তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়ন নয়, তবে কাজগুলো মৌলিকভাবে হারাম এমন কাজ করা। এটা হারাম কবিরা গোনাহ। তবে কুফুরি নয় (৩) মৌলিকভাবে কাজ হারাম নয়, তবে গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। এটা স্পষ্ট হারাম নয়, তবে কখনো কখনো প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তা নাজায়েজ বা মাকরুহ বা বৈধ হতে পারে। এখন এই তিন প্রকারকে সামনে রেখেই মুলত আমরা আলোচনা পেশ করব ইনশাআল্লাহ। এবার আসুন, পার্লামেন্ট সদস্যদের ব্যাপারে কথা। পার্লামেন্টের সদস্যগনের মুল কাজ হলো সংবিধান রক্ষা করা, সংবিধানে নীতিমালা প্রণয়ন করা। সংবিধান প্রণয়ন বা তা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করা কিংবা আইনকানুন, বিধিবিধান ও নীতিমালা রচনা করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং তা কার্যকরকরণে ভূমিকা রাখা। কোনো শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূলই হলো তার আইনকানুন ও বিধিবিধান। ইসলামি শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূল হলো, আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের অধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার। পক্ষান্তরে তাগুতি শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূলই হলো, এই অধিকার মানবমস্তিষ্কের জন্য সাব্যস্ত করা এবং এক ও অদ্বিতীয় উপাস্য আল্লাহ তাআলা থেকে নিরোধ করা। ইসলাম ও গণতন্ত্রের মৌলিক দ্বন্দ্ব হলো, ইসলাম শেখায়, ইলাহ হলেন একমাত্র আল্লাহ। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অপরদিকে গণতন্ত্র শেখায়, ইলাহ হলো একমাত্র জনগণ। ‘লা ইলাহা ইল্লান্নাস’ (নাঊযুবিল্লাহ)। সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতি শাসনব্যবস্থার অধীনে আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের চাকরি করবে, সে স্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা তার কুফর প্রমাণিত। (1) পার্লামেন্টে হাকিমিয়্যাত তথা আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের অধিকার আল্লাহ তাআলাকে দেওয়া হয় না। আইনের উৎস কুরআন ও সুন্নাহকে মানা হয় না। দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধিসমূহ ইসলাম থেকে গ্রহণ করা হয় না। কোনো বিধি যদি বাহ্যিকভাবে ইসলামের সঙ্গে মিলেও যায়, তা নিরেট কাকতালীয় ব্যাপার ছাড়া কিছু হয় না। বৈধ-অবৈধ, সিদ্ধ-নিষিদ্ধ আখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর শরিয়ত বিবেচনা করা হয় না। জীবনের সবক্ষেত্রে ক্ষমতাধরদের ফায়সালাই চূড়ান্ত ফায়সালা হিসেবে বিবেচিত হয়; এমনকি এর অন্যথা করা হলে তা ইসলামসম্মত হলেও তাদের বিচারে আইনত দণ্ডনীয় হিসেবে গণ্য হয়। এমনকি মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যাপারে (পারসোনাল ল') যদি ইসলামের ওপর আমল করার স্বাধীনতা থাকে, তাও মুসলমানরা আল্লাহপ্রদত্ত অধিকার হিসেবে পায় না; বরং তাগুতি শাসনব্যবস্থা অনুগ্রহস্বরূপ তাদেরকে এর সুযোগ দিয়েছে বলেই তারা এই অধিকার লাভ করে। এককথায়, তাগুতি শাসনব্যবস্থায় সংবিধান, মন্ত্রণালয়, সংসদ, আদালত সবকিছুই রচিত ও পরিচালিত হয় মানবরচিত বিধান অনুসারে; শরিয়াহ নির্দেশিত নীতি অনুসারে নয়। (2) আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ বলেনঃ আকাইদ ও আহকামের বিদ্রূপ কিংবা অস্বীকার তো এজন্যই কুফর যে, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য বর্জন এবং তাঁদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ। সুতরাং গোটা ইসলামকে অস্বীকার বা বিদ্রূপ করা আর ইসলামের কোনো একটি বিষয়কে অস্বীকার বা বিদ্রূপ করা একই কথা! উভয় ক্ষেত্রেই একথা বাস্তব যে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং ঔদ্ধত্য ও বিরুদ্ধতা প্রকাশ করেছে। ইবলীস তো কাফির মরদূদ হয়েছিল একটি হুকুমের উপর আপত্তি করেই। বিষয়টি এমনিতেও স্পষ্ট। এরপরও আল্লাহ তাআলা কুরআন হাকীমে একাধিক জায়গায় তা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) এইজন্য পার্লামেন্টে যারা শরীয়াহ বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে, যারা কুরআনের বিপক্ষে সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে বিধান জারি করে, জেনে বুঝে শরীয়াহ আইনের চাইতে কুফুরি আইনকে উত্তম মনে করে অথবা যদি মনে করে যেঃ শরীয়াহ অনুযায়ী বিচার করা অপরিহার্য নয় এবং ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে, অথচ সে নিশ্চিত জানে যে এটি আল্লাহর বিধান; তাহলে এমন ব্যক্তিরা সুস্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছে। এটি কুফরে আকবার তথা বড় কুফুরি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ. ‘যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা করে না, তারাই কাফির, তারাই জালিম, তারাই ফাসিক (সুরা মায়িদাহ: ৪৭) আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা না-করার ক্ষতিই যদি এত ভয়াবহ হয়, তাহলে সেই বিধানের বিপরীত বিধান প্রণয়ন করা ও তা জারি করা কত ভয়াবহ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ কারণেই সেসব ব্যক্তিবর্গকেও তাগুত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যাদের কাছে অন্যরা মানবরিচত বিধান অনুসারে বিচার প্রার্থনা করে। (3) যেমন আল্লাহ বলেনঃ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। (সুরা নিসা: ৬০) তাগুত শব্দটি যদিও ব্যাপক; কিন্তু এখানে পূর্বাপর কথা থেকে স্পষ্ট যে, এর দ্বারা শয়তান বা নফস উদ্দেশ্য নয়, পাথরের মূর্তি বা জ্যোতিষিও উদ্দেশ্য নয়। কারণ, তাদের কাছে বিচার প্রার্থনা করা হয় না। এর দ্বারা সেসব মানুষ উদ্দেশ্য, যারা আল্লাহর ফায়সালা ব্যতিরেকে ভিন্ন ফায়সালা প্রদান করে। এজাতীয় ফায়সালাকে কুরআনে জাহিলিয়্যাতের ফায়সালা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন রাব্বে কারিম বলেনঃ أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ তারা কি জাহিলিয়্যাতের ফায়সালা কামনা করে? অথচ বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফায়সালাকারী আর কে হতে পারে!( সুরা মায়িদাহ: ৫০ ) এটাই হলো সরকারি চাকুরির যে তিনটি পর্যায় হতে পারে, তার প্রথম পর্যায় তথা তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। (4) নোটঃ (১) উপরোক্ত পদে যেই টিম কাজ করে, সেই টিম বা দল দলগতভাবে মুরতাদ। মানুষকে কাফির বলার প্রকার দুইটি (১) তাকফিরে আমঃ ব্যাপকভাবে তাকফির করা বা কাফির বলা। জড়িত প্রত্যেককে কাফির বলা দলগতভাবে, সুনির্দিষ্ট কাউকে নয়। (২) তাকফিরে মুআইয়ানঃ ব্যক্তিবিশেষ নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফির বা মুরতাদ বলা। এটি খুবই সেন্সিটিভ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ কাউকে কাফির সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হলে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত ঈলম থাকা আবশ্যক, নতুবা কোনভাবেই একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোন ব্যক্তিকে হুটহাট করে কাফির ফতোয়া দেয়া কবিরা গোনাহ, বরং আরো ভয়াবহ। পার্লামেন্ট সদস্যদেরকে দলগতভাবে মুরতাদ বলা হয় দেশে বিধি-বিধান শরয়ী বিধানের বিপরীতে প্রণয়নের কারণে। এরমানে এটা নয় যেঃ এখানে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিই কাফির হয়ে গিয়েছে। দলগতভাবে মুরতাদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ এই দলটি কুফুরি কাজ করেছে, সবাই জড়িত ছিলো। যেমনঃ কোথাও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে ঘটনাস্থলের সবাইকে প্রাথমিক আসামী বলে মামলা করা হয়, দলগতভাবে সবাই আসামী, কিন্তু সেখানে নিরাপরাধ মানুষ অনেকেই আছে। যার কারণে এবার মুল আসামী সাব্যস্ত করতে যেয়ে যাচাই বাছাই শুরু করা হয়। তাকফিরে আম বা দলগত তাকফির বা কাফের এটাকে বলে। তাই ব্যাপকভাবে মুরতাদ বলা হচ্ছে দলগত বিবেচনায়। কিন্তু কখনো কখনো সেই দলে কোন নিরুপায় মুমিন, বা বাধ্যগত মুমিন থাকতে পারে, যে বাধ্য হয়েছে, অথবা যে মনেপ্রাণে কুফুরি বিধান প্রণয়নে বিশ্বাসী নয়। তাহলে এমন ব্যক্তি কাফির হবে না, মুরতাদ হবে না। এই পয়েন্ট বোঝা খুবই জরুরী। পার্লামেন্টের কোন সদস্যকে দেখলেই সাথে সাথে তাকে মুরতাদ বা কাফির বলাটা সুস্পষ্ট ভুল হবে। কারণ এটি তখন তাকফিরে মুআইয়ান তথা ব্যক্তিবিশেষ তাকফির হবে। এটার জন্য ঐ ব্যক্তির গ্রহণযোগ্য ওজর, তার সার্বিক অবস্থা যাচাই করা জরুরি। তবে এমন ব্যক্তি যে কবিরা গোনাহে জড়িত তাতে কোন সন্দেহ নেই। নোট-২ঃ তবে পার্লামেন্ট বা বিচার বিভাগের সদস্যদের যারা কুরআন হাদিসের সুস্পষ্ট অকাট্য কোন বিধি বিধানকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করবে, যা কোন শরয়ী বিধানের উপর ঘৃণাভরে আপত্তি তুলবে, কটাক্ষ করবে, যেই বিধানগুলি শরীয়তের মৌলিক স্বঃতশিদ্ধ বিষয়ঃ এমন বিষয়ে আবার তাদের কোন ওজর আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না, যাচাই করা হবে না । তারা মুরতাদ বলেই গন্য হবে। (২) অনুরুপভাবে যারা সুপ্রিম কোর্ট অথবা জর্জ কোর্ট তথা সর্বোচ্চ বিচারপতির আসনে থাকে, যারা নিজ পদবলে ক্ষমতাবলে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে কুফরি বিধানের উপর স্বেচ্ছায় রায় প্রদান করে, যারা শরীয়তের প্রতি বিদ্বেষ রেখে শাতিমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে রায় প্রদান করে এবং নির্দোষ ভাইদেরকে ফাঁসির রায় প্রদান করে; যারা কুরআনের বিপক্ষে সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে বিধান জারি করে জেনেবুঝে; শরীয়াহ আইনের চাইতে কুফুরি আইনকে উত্তম মনে করে অথবা যদি মনে করে যেঃ শরীয়াহ অনুযায়ি বিচার করা অপরিহার্য নয় এবং ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে, অথচ সে নিশ্চিত জানে যে এটি আল্লাহর বিধান; তাহলে এমন ব্যক্তিরা সুস্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছে। এটি কুফরে আকবার তথা বড় কুফুরি। এমন প্রত্যেক ব্যক্তি তাগুত এবং মুরতাদ। এরা দলগতভাবে মুরতাদ। এদের প্রত্যেকের অবস্থা সর্বোচ্চ যাচাই ব্যতীত তাদেরকে মুসলিম বলা হবে না। (5) কোন বিচারক যদি অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে শরীয়ত বিরোধী রায় প্রদান করে, এবং সে শরীয়তের বাধ্যবাধকতাকে অপরিহার্য বলেই মেনে নিয়ে বাধ্য হয়ে অথবা প্রবৃত্তির অনুসারণে এমন রায় প্রদান করেঃ যা শরীয়াহর সঙ্গে সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক এবং যে এমন কাজ করে থাকেঃ তাহলে তার এই কাজও কুফর, তবে এটি কুফরে আসগার তথা বড় কুফরের চাইতে একটু কম। কবীরা গোনাহ হবে, তবে কাফির হবে না। (6) তার এই চাকুরি জায়েজ নয়। এবং তার অধিকাংশ কাজ এমন হলে তার বেতন হালাল হবে না। কারণ গোনাহ, কুফুরি কাজ করে বিনিময় গ্রহণ জায়েজ নাই। (7) ভালোভাবে বুঝে নিন, শরীয়তের বিধি বিধানকে হক ও অবশ্যপালনীয় বলে স্বীকার করার পর পালনে ত্রুটি হলে তা গোনাহ, কুফর নয়। কারণ এই ব্যক্তি নিজেকে অপরাধী মনে করে। পক্ষান্তরে বিধানের উপর বিরুদ্ধপ্রশ্ন বা প্রতিবাদের অর্থ সরাসরি আনুগত্য-ত্যাগ, যা সাধারণ অপরাধ নয়, বিদ্রোহ। এটা মানুষকে দুনিয়ার বিধানে ‘মোবাহুদ দম’ (হত্যাযোগ্য) আর আখিরাতের বিধানে চিরজাহান্নামী সাব্যস্ত করে। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) তবে যারা এমনি গ্রাম্য পর্যায়ের আদলতের বিচারক বা সাধারণ কোর্টের বিচারক, যেখানে কোন জাতীয় আইন পাশ হয় না, যেখানে স্পষ্ট শরীয়াহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন পাশ হয় না, তবে মাঝেমধ্যেই মিথ্যা মামলার রায়, অন্যায়ের পক্ষে ফায়সালা দেয়া ইত্যাদি কাজে যেসব বিচারক লিপ্ত থাকে; তাদের জন্য এমন চাকুরি নাজায়েজ। আর যদি কেউ এমন কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে থাকে, ঘুষ খেয়ে কাজ করে, হোক সে উকিল বা বিচারপতিঃ তাহলে তার চাকুরি অবৈধ এবং বেতনও বৈধ নয়। এটা হলো দ্বিতীয় পর্যায়ে তথা যা সত্তাগতভাবে হারাম। আর যদি কোন ব্যক্তি সৎ নিয়তে নিম্ন পর্যায়ের বিচারপতি/উকিল ইত্যাদি পদে যোগ দেয়, যার নিয়ত হলো মানুষকে হেল্প করা, অথবা যার কাছে এই মুহুর্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিন্ন কোন পন্থা বাকি নাইঃ (কারণ উচ্চপদে বিচারপতি হলে তার পক্ষে কখনো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কুরআন সুন্নাহর অনুযায়ী রায় প্রদান করা সম্ভব নয়, তাই যেটা স্পষ্ট অসম্ভব, যেখানের সিস্টেমেই কুরআন সুন্নাহ নাইঃ সেখানে চাকুরিতে যোগদান করা যাবে না।) তাহলে এমন ব্যক্তি যদি এই পদে যোগ দেয় তাহলে সেটা তার জন্য জায়েজ হতে পারে। (9) এসব পদে থাকতে গেলে মিথ্যা বা স্বজনপ্রীতি করতেই হয়। সেরকম কিছু পাওয়া গেলে তা হারাম হবে। তবে বেতন হালাল হবে। কিন্তু এসব চাকুরি কখনো মাকরুহ থেকে খালি নয়। (10) এটা হলো তৃতীয় পর্যায়েরঃ যা কখনো কখনো নাজায়েজ হয়, কখনো কখনো মাকরুহ হয়। সর্বোপরি এটিও প্রকারান্তরে তাগুতের দল ভারী করার একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ। (1) وقال ابن كثير رحمه الله : " فمن ترك الشرع المحكم المنزل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء ، وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر ، فكيف بمن تحاكم إلى الياسا وقدمها عليه ؟! من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين " انتهى من "البداية والنهاية" (13/139) قال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله : " والإنسان متى حلل الحرام المجمع عليه ، أو حرم الحلال المجمع عليه ، أو بدل الشرع المجمع عليه ، كان كافرا مرتدا باتفاق الفقهاء " انتهى من "مجموع الفتاوى" (3/267). (2) یعنی جو لوگ اللہ کے نازل کیے ہوئے احکام کو واجب نہیں سمجھتے، اور ان پر فیصلہ نہیں دیتے بلکہ ان کے خلاف فیصلہ کرتے ہے،او کافر و منکر جن کی سزا دایمی جہنم ہے ( معارف القران: 161/3) ﴿وَمَن لَمْ يَحْكم بِما أنْـزَلَ اللهُ﴾ مُسْتَهِينًا بِهِ ﴿فَأُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ﴾ قالَ ابْنُ عَبّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما: مَن لَمْ يَحْكم جاحِدًا فَهو كافِرٌ، وإنْ لَمْ يَكُنْ جاحِدًا فَهو فاسِقٌ ظالِمٌ، وقالَ ابْنُ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: هو عامٌّ في اليَهُودِ وغَيْرِهِمْ. ( تفسير النسفي: 449/1) قال القرطبي: قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿أَرْباباً مِنْ دُونِ اللَّهِ﴾ قَالَ أَهْلُ الْمَعَانِي: جَعَلُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ كالأرباب حيث أطاعوهم في كل شي، وَمِنْهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿قالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذا جَعَلَهُ ناراً﴾(٢) [الكهف: ٩٦] أَيْ كَالنَّارِ. (3) قال السعدي في تفسيره: يشهد تعالى عباده من حالة المنافقين ويتعجب: {الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ} مؤمنون بما جاء به الرسول وبما قبله، ومع هذا {يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ} وهو كل من حكم بغير شرع الله فهو طاغوت. والحال أنهم {قد أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ} فكيف يجتمع هذا والإيمان؟ فإن الإيمان يقتضي الانقياد لشرع الله وتحكيمه في كل أمر من الأمور، فمَنْ زعم أنه مؤمن واختار حكم الطاغوت على حكم الله، فهو كاذب في ذلك. وهذا من إضلال الشيطان إياهم، ولهذا قال: {وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلالا بَعِيدًا} عن الحق (تفسير السعدي: 108) (4) قال ابن القيم في مدارج السالكين: والصحيح أن الحكم بغير ما أنزل الله يتناول الكفرين، الأصغر والأكبر بحسب حال الحاكم فإنه إن اعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله في هذه الواقعة، وعدل عنه عصيانا، مع اعترافه بأنه مستحق للعقوبة، فهذا كفر أصغر، وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) قالَ عِكْرِمَةُ: قَوْلُهُ ﴿ومَن لَمْ يَحْكم بِما أنْزَلَ اللَّهُ﴾ إنَّما يَتَناوَلُ مَن أنْكَرَ بِقَلْبِهِ وجَحَدَ بِلِسانِهِ، أمّا مَن عَرَفَ بِقَلْبِهِ كَوْنَهُ حُكْمَ اللَّهِ وأقَرَّ بِلِسانِهِ كَوْنَهُ حُكْمَ اللَّهِ، إلّا أنَّهُ أتى بِما يُضادُّهُ فَهو حاكِمٌ بِما أنْزَلَ اللَّهُ تَعالى، ولَكِنَّهُ تارِكٌ لَهُ، فَلا يَلْزَمُ دُخُولُهُ تَحْتَ هَذِهِ الآيَةِ، وهَذا هو الجَوابُ الصَّحِيحُ واللَّهُ أعْلَمُ ( تفسير الرازي: 445/5) (5) وفي هذه الآية دلالة على أن من رد شيئا من أوامر الله تعالى أو أوامر رسوله صلى الله عليه وسلم فهو خارج من الإسلام سواء رده من جهة الشك فيه أو من جهة ترك القبول والامتناع من التسليم ، وذلك يوجب صحة ما ذهب إليه الصحابة في حكمهم بارتداد من امتنع من أداء الزكاة وقتلهم وسبي ذراريهم ؛ لأن الله تعالى حكم بأن من لم يسلم للنبي صلى الله عليه وسلم قضاءه وحكمه فليس من أهل الإيمان (احكام القرآن للجصاص: 181/3) ﴿فَأُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ﴾ لِاسْتِهانَتِهِمْ بِهِ وتَمَرُّدِهِمْ بِأنْ حَكَمُوا بِغَيْرِهِ، ولِذَلِكَ وصَفَهم بِقَوْلِهِ الكافِرُونَ والظّالِمُونَ والفاسِقُونَ، فَكُفْرُهم لِإنْكارِهِ، وظُلْمُهم بِالحُكْمِ عَلى خِلافِهِ، وفِسْقُهم بِالخُرُوجِ عَنْهُ ( تفسير البيضاوي: ١٢٨/٢) ولما كان الأمر كذلك فإن كلام السلف ومنهم ابن القيم كلام لا غبار عليه، فإذا حكم الحاكم برشوة أو لقرابة، أو شفاعة أو ما أشبه ذلك فلا شك أن ذلك كفر دون كفر..وأما ما جد في حياة المسلمين - ولأول مرة في تاريخهم - وهو تنحية شريعة الله عن الحكم ورميها بالرجعية والتخلف وأنها لم تعد تواكب التقدم الحضاري، والعصر المتطور فهذه ردة جديدة في حياة المسلمين. إذ الأمر لم يقتصر على تلك الدعاوى التافهة، بل تعداه إلى إقصائها فعلاً عن واقع الحياة واستبدال الذي هو أدنى بها، فحل محلها القانون الفرنسي أو الإنجليزي أو الأمريكي أو الاشتراكية الإلحادية وما أشبه ذلك من تلك النظم الجاهلية الكافرة.(الولاء والبراء لسعيد القحطان: ص٦٨) (6)قال ابن القيم في مدارج السالكين: والصحيح أن الحكم بغير ما أنزل الله يتناول الكفرين، الأصغر والأكبر بحسب حال الحاكم فإنه إن اعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله في هذه الواقعة، وعدل عنه عصيانا، مع اعترافه بأنه مستحق للعقوبة، فهذا كفر أصغر، وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) (7)"(لا تصح الإجارة لعسب التيس) وهو نزوه على الإناث (و) لا (لأجل المعاصي مثل الغناء ‌والنوح ‌والملاهي). وفي الرد:مطلب في الاستئجار على المعاصي (قوله مثل الغناء) بالكسر والمد الصوت، وأما المقصور فهو اليسار صحاح (قوله والنوح) البكاء على الميت وتعديد محاسنه (قوله والملاهي) كالمزامير والطبل، وإذا كان الطبل لغير اللهو فلا بأس به كطبل الغزاة والعرس لما في الأجناس ... وفي المنتقى: امرأة نائحة أو صاحبة طبل أو زمر اكتسبت مالا ردته على أربابه إن علموا وإلا تتصدق به، وإن من غير شرط فهو لها: قال الإمام الأستاذ لا يطيب، والمعروف كالمشروط اهـ. قلت: وهذا مما يتعين الأخذ به في زماننا لعلمهم أنهم لا يذهبون إلا بأجر ألبتة." (فتاوي شامي: كتاب الاجارة، مطلب في الاستئجار علي المعاصي، ج:6، ص:55، ط:سعيد) (8)وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ) المائدة/2) مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ) أخرجه مسلم في صحيحه (4831). وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الإثْمِ وَالْعُدْوَانِ ) يأمر تعالى عباده المؤمنين بالمعاونة على فعل الخيرات ، وهو البر ، وترك المنكرات ، وهو التقوى ، وينهاهم عن التناصر على الباطل ، والتعاون على المآثم ، والمحارم . "( تفسير ابن كثير :2 / 12-13) (9) فَمَنِ ٱضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغࣲ وَلَا عَادࣲ فَلَاۤ إِثۡمَ عَلَیۡهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورࣱ رَّحِیمٌ ( سورة البقرة:173) عن عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..( صحيح البخاري: 1) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) (10)وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15)
বিস্তারিত পড়ুন

সরকারি চাকরির বিধানঃ ২য় পর্ব

Hm Sulayman

১১ মে, ২০২৫

সেনাবাহিনী, র‍্যাব, সীমান্তরক্ষী, বিডিআর, নৌবাহিনী, পুলিশ সহজ কথায় সামরিক বাহিনী তথা ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরির বিধান নিয়ে লম্বা আলোচনা আছে। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় মৌলিকভাবে ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরি করা জায়েজ নয় বলেই মনে হয়। কুরআন সুন্নাহর দলিলের আলোকে এটাই প্রতীয়মান হয়। অবশ্য ঢালাওভাবে হারাম বা কুফর বিষয়টি এমন নয়। বরং জটিল এই মাসআলার ক্ষেত্রে টু দ্যা পয়েন্ট অথবা পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বিস্তৃত মাসআলা কিতাবে পাওয়া যায় না। এরজন্য ডিফেন্স ফোর্সের প্রতিটি ক্যাটাগরি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করে এর মাসআলা বের করতে হবে। যা বেশ দুরূহ ব্যাপার। আলহামদুলিল্লাহ, বিষয়টি নিয়ে সাধ্যমত বিস্তৃত অধ্যায়ন, ফিকির, গবেষণা এবং খোজ নেয়ার পরে মোটামোটি আকারে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছি। মৌলিকভাবে ডিফেন্স ফোর্স বা উল্লেখিত সামরিক বাহিনীগুলোর চাকুরির পজিশন অবস্থা ভেদে তিন প্রকার বিধান আরোপিত হবে। মূলত সরকারি চাকুরির তিনটি পর্যায় হতে পারেঃ তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়ন নয়, তবে কাজগুলো মৌলিকভাবে হারাম এমন কাজ করা। এটা হারাম কবিরা গোনাহ। তবে কুফুরি নয়। মৌলিকভাবে কাজ হারাম নয়, তবে গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। এটা স্পষ্ট হারাম নয়, তবে কখনো কখনো প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তা নাজায়েজ বা মাকরুহ বা বৈধ হতে পারে। এখন এই তিন প্রকারকে সামনে রেখেই মুলত আমরা আলোচনা পেশ করব ইনশাআল্লাহ। (১) কেউ যদি তাগুতি এই সৈন্যবাহিনীতে এই নিয়তে যোগ দেয় যেঃ সে প্রচলিত সাংবিধানিক সমস্ত বিধি-নিষেধ প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হবে, কুফর প্রতিষ্ঠা, অথবা কাফিরদের সহযোগিতা করা, অথবা প্রয়োজনে নিরাপরাধ মুমিনের রক্ত ঝরানোর ক্ষেত্রে পিছপা হবে না অথবা আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট বিধি-নিষেধ লঙ্ঘণ করতে পিছপা হবে না, চাকুরি বাচানোর জন্য জেনে বুঝে এমন নিয়তে যারা যোগদান করবে, অথবা যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে, লেখালেখি করে, মাঠে ময়দানে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে গনতন্ত্র এবং সেক্যুলারিজম রক্ষার জন্য এসব তাওহিদের ঝাণ্ডাবাহী লোকদের বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় গুলি চালায়; তারা মুরতাদ বলে গন্য হবে। তারা দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যাবে। (1) অনুরুপভাবে যারা জাতিসংঘের হয়ে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে বা মুসলিম জনগনের বিরুদ্ধে কুফফার রাষ্ট্রের পক্ষে অস্ত্রধারণ করে, এবং এই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার কারণে গর্ববোধ করেঃ এরাও মুরতাদ বলে বিবেচিত হবে, দ্বীন থেকে বের হয়ে গিয়েছে বলে গণ্য হবে। মুসলমানের বিপক্ষে কাফিরদের পক্ষ হয়ে লড়াই করা আক্রমণ করা স্পষ্ট কুফুরি। (2) যারা গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ রক্ষার জন্য নির্বিচারে মুসলিম ভাইদেরকে দ্বীনের প্রতি আক্রোশ হয়ে আটক করে, অথবা মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মজা পায়ঃ এমন প্রত্যেক ব্যক্তি মুরতাদ বলে গণ্য হবে। (3) বিশেষত যারা কর্নেল, মেজর, ডিআইজি, সেনাপ্রধাণ, কমান্ডার এবং এই প্রধান ব্যক্তিত্বতের অত্যান্ত নিকবর্তী সেনাপ্রধানরা এজাতীয় কাজের কমান্ড করে থাকে। এরা চিন্তা চেতনায় সম্পূর্ণ শরীয়াহ বিরোধী হয়ে থাকে বেশিরভাগ। মোটকথা যারা উপরোক্ত চিন্তা-চেতনা লালন করে এবং শরীয়াহ বিরোধী হয়ে থাকেঃ এই মাসআলা তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে। আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ বলেনঃ ঈমান তখনই অস্তিত্ব লাভ করে যখন ইসলামের সকল অকাট্য বিধান ও বিশ্বাস মন থেকে কবুল করা হয়। পক্ষান্তরে এসবের কোনো একটিকেও অস্বীকার করার দ্বারা ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) উল্লেখিত পরিস্থিতিতে এইপ্রকার ডিফেন্স ফোর্সের বিধান হলোঃ এরা দলগত মুরতাদ বলে গন্য হবে। অর্থাৎ, পুরো জামাতের উপর মুরতাদের হুকুম আরোপিত হবে। হ্যা, ব্যক্তিগতভাবে কেউ আবশ্যিকভাবে বাধ্য থাকতে পারে বা শরয়ী গ্রহণযোগ্য কোন ওজর /কারণ থাকতে পারে। সেটা যাচাই করে তারপর সেই ব্যক্তির উপর বিধান আসবে। উপরোক্ত পদে যেই টিম কাজ করে, সেই টিম বা দল দলগতভাবে মুরতাদ। মানুষকে কাফির বলার প্রকার দুইটি (১) তাকফিরে আমঃ ব্যাপকভাবে তাকফির করা বা কাফির বলা। জড়িত প্রত্যেককে কাফির বলা দলগতভাবে, সুনিদৃষ্ট কাউকে নয়। (২) তাকফিরে মুআইয়ানঃ ব্যক্তিবিশেষ নিদৃষ্টভাবে কাউকে কাফির বা মুরতাদ বলা। এটি খুবই সেন্সিটিভ এবং অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ কাউকে কাফির সুনিদৃষ্টভাবে বলতে হলে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত ঈলম থাকা আবশ্যক, নতুবা কোনভাবেই একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোন ব্যক্তিকে হুটহাট করে কাফির ফতোয়া দেয়া কবিরা গোনাহ, বরং আরো ভয়াবহ। কিন্তু তার সেই কাজ যে কমপক্ষে কবীরা গোনাহ হবেঃ এব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। (4) এবং এই পর্যায়ে কাজ করা কারোর জন্যই জায়েজ নাই এবং তার বেতন হালাল হবে না। প্রসঙ্গত এখানে আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ এর একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ যারা শরীয়তের শুধু ‘শান্তির বিধান গ্রহণ করেন আর জিহাদের বিধানকে সন্ত্রাস বা উগ্রবাদিতা বলেন; উপদেশের কথাগুলো গ্রহণ করেন আর হদ-তাযীর ও কিসাসের বিধান বর্জনীয় মনে করেন; ইবাদতের বিষয়গুলো গ্রহণ করেন, আর লেনদেন ও হালাল-হারামের বিধান মানতে অসম্মত থাকেন; ব্যক্তিগত জীবনের বিধিবিধান গ্রহণ করেন, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র-পরিচালনার বিধি-বিধান (প্রশাসন, নির্বাহী ও বিচার-বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট) সম্পর্কে বিরূপ থাকেন; অথবা ইবাদত ও লেনদেনের বিধান মানেন, কিন্তু বেশ-ভূষা, আনন্দ-বিষাদ, পর্ব-উৎসব ও জীবন যাপনের আদব কায়েদার ইসলামী নির্দেশ ও নির্দেশনার প্রতি বিরূপ থাকেন বা মানাকে জরুরি মনে করেন না এরা সবাই ইসলামের কিছু অংশের অস্বীকার বা কিছু অংশের উপর বিরুদ্ধপ্রশ্নের কারণে নিজের ঈমান হারিয়ে বসেছেন। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) (২) যারা ডিফেন্স ফোর্স তথা উল্লেখিত বাহিনীতে যোগদান এজন্য করে যেঃ এখানে গেলে প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে, সুদ ঘুষের টাকা পাবে, যদিও অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের জন্য জুলুম করা লাগতে পারে, তাদের সব খারাবি জেনেও যে অতিরিক্ত টাকা পয়সা অর্জনের জন্য যাবে, এবং কখনো কখনো বাধ্য হয়ে মুসলিমদের বিপক্ষে তাকে অস্ত্রধারণ করতে হয়; সে কবিরা গোনাহ করবে এবং তার এই চাকুরি অবৈধ বলে গন্য হবে এবং অন্যায়ভাবে যা গ্রহণ করবে তা হারাম উপার্জন বলে বিবেচিত হবে, (5) এবং যদি কোন মুসলিমকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে থাকে নিজের চাকুরি বাচানোর জন্য ( সে দ্বীন ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ রেখে হত্যা করেছে বিষয়টি এমন নয়) তাহলে এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কেউ কেউ মুরতাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন। ( তবে সহীহ কথা হলোঃ এমন ব্যক্তি মুরতাদ হবে না (6) তবে তার এই কবীরা গোনাহের পরিণতি ভয়াবহ।) এমন সেক্টরে চাকুরি করা নাজায়েজ, তবে তার নায্য বেতন হালাল হবে। (7) (৩) যেই ব্যক্তি সেক্যুলার রাষ্ট্রে উপরোক্ত কোন উদ্দেশ্যে নয়, বরং দেশ এবং জনগনের সেবা করার মানসেই ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরি নিতে চায় অথবা বাধ্য হয়েই সে চাকুরিতে জয়েন করছে অন্য উপায় না থাকার কারণে তাহলে এমন ব্যক্তি ভ্রষ্টতায় লিপ্ত আছে। সেক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির জন্য সৈন্যবাহিনীতে চাকুরি করা মাকরুহ। হারামের কাছাকাছি, তবে ইনকাম হালাল হবে। অতিসত্তর তাকে দ্রুত এই চাকুরি ছেড়ে ভিন্ন আরেকটি চাকুরিকে শিফট হতে হবে। সন্দেহমুক্ত কোন চাকুরি তাকে খুজতে হবে। ( তবে যদি সে এমন পোস্টে চাকুরি করেঃ যেখানে সরকারি বড় বড় কাজের কোন সম্পৃক্ততা নাই, এবং জনগনের হক্ব নস্ট করারও আশঙ্কা নাই; বরং জনগনের সেবার জন্য নিম্ন পদস্থ কোন সেক্টর যেমনতঃ হাবিলদার, দারোয়ান, কনস্টেবল; তাহলে এমন ব্যক্তির চাকুরি করার সুযোগ আছে। (9) কিন্তু তার উচিত ভিন্ন কোন চাকুরিতে জয়েন করা। তাছাড়া ডিফেন্স ফোর্সের কিছু বিধি-নিষেধ ক্বানুন রয়েছে। যেমন এসব ফোর্সের বেশিরভাগ জায়গায় দাড়ি কেটে ফেলতে বলা হয়। দাড়ি না কাটলে প্রমোশন হয় না। কোথাও দাড়িকাটা বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে, বেপর্দা ফ্রি মিক্সিং তো আছেই। (10) জাতীয়তাবাদী পতাকাকে সম্মান জানাতে হয়। ইত্যাদি এসব কিছু যদি বাধ্যতামুলক হয়ে থাকে; তাহলে চাকুরির জন্য এইসব কাজ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। (11) দ্রুত এমন চাকুরি ছাড়া জরুরী। তবে শর্তসাপেক্ষে বেতন হালাল হবে, যা ২ এবং ৩ নাম্বার পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে। (1) عن عبد الله بن مسعود قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله ، وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث : النفس بالنفس ، والثيب الزاني ، والتارك لدينه المفارق للجماعة. روى البخاري: 6484 ومسلم 1676 وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) قال ابنُ جريرٍ: (يقولُ: ومن يتَّخِذْهم منكم بِطانةً من دونِ المؤمنينَ، ويؤثِرِ المقامَ معهم على الهِجرةِ إلى رَسولِ اللهِ ودارِ الإسلامِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ يقولُ: فالذين يَفعَلون ذلك منكم هم الذين خالفوا أمرَ اللهِ، فوَضَعوا الوَلايةَ في غيرِ مَوضِعِها، وعَصَوا اللهَ في أمْرِه. وقيل: إنَّ ذلك نزل نهيًا من اللهِ المؤمنينَ عن موالاةِ أقرِبائِهم الذين لم يُهاجِروا من أرضِ الشِّركِ إلى دارِ الإسلامِ: تفسير الطبري: 383/11) وقال السَّعديُّ: (وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنكُمْ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ؛ لأنَّهم تجَرَّؤوا على معاصي اللهِ، واتَّخَذوا أعداءَ اللهِ أولياءَ، وأصلُ الولايةِ: المحبَّةُ والنُّصرةُ، وذلك أنَّ اتخاذَهم أولياءَ موجِبٌ لتقديمِ طاعتِهم على طاعةِ اللهِ، ومحَبَّتَهم على محبَّةِ اللهِ ورَسولِه) (2) فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ وَاللَّهُ أَرْكَسَهُم بِمَا كَسَبُوا أَتُرِيدُونَ أَن تَهْدُوا مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاء فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاء حَتَّىَ يُهَاجِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ… [النساء: 88-89] . قال السَّعديُّ: (المرادُ بالمُنافِقين المذكورينَ في هذه الآياتِ: المُنافِقون المظهِرون إسلامَهم، ولم يهاجِروا مع كُفْرِهم، وكان قد وقع بين الصَّحابةِ رِضوانُ اللهِ عليهم فيهم اشتباهٌ، فبعضُهم تحرَّج عن قتالِهم، وقَطَع موالاتَهم بسبَبِ ما أظهَروه من الإيمانِ، وبعضُهم عَلِم أحوالَهم بقرائِنِ أفعالِهم، فحَكَم بكُفْرِهم، فأخبرهم اللهُ تعالى أنَّه لا ينبغي لكم أن تشتَبِهوا فيهم ولا تشُكُّوا، بل أمْرُهم واضِحٌ غيرُ مُشكِلٍ، إنَّهم مُنافِقون قد تكرَّر كُفْرُهم، وودُّوا مع ذلك كُفْرَكم، وأن تكونوا مِثْلَهم، فإذا تحقَّقْتُم ذلك منهم فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاءَ، وهذا يستلزِمُ عَدَمَ محبَّتِهم؛ لأنَّ الوَلايةَ فرعُ المحبَّةِ.( تفسير السعدي: ص192) (3) قَولُ الله تعالى: وَمَن يَتَوَلَّهُمْ مِنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ [المائدة: 51] . قال ابنُ جريرٍ: (من تولَّاهم ونصَرَهم على المؤمنين فهو من أهلِ دينِهم ومِلَّتِهم؛ فإنَّه لا يتولَّى متولٍّ أحدًا إلَّا وهو به وبدينِه وما هو عليه راضٍ، وإذا رَضِيَه ورَضِيَ دينَه فقد عادى ما خالفه وسَخِطَه، وصار حُكمُه حُكمَه ( تفسير ابن جرير: 508/8) (4) عن علي رضي الله عنه: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ (بخاري: 4340، مسلم: 1840) قال الطبري – رحمه الله - :عن ابن عباس قال : فأخبر الله سبحانه أنه من كفر من بعد إيمانه : فعليه غضب من الله وله عذاب عظيم ، فأما من أكره فتكلم به لسانه وخالفه قلبه بالإيمان لينجو بذلك من عدوّه : فلا حرج عليه ؛ لأن الله سبحانه إنما يأخذ العباد بما عقدت عليه قلوبهم . " تفسير الطبري " ( 17 / 305 ) (5) والاستئجار على المعاصي باطل فإن بعقد الإجارة يستحق تسليم المعقود عليه شرعا ولا يجوز أن يستحق على المرء فعل به يكون عاصيا شرعا." (المبسوط: کتاب الإجارات، باب الإجارۃ الفاسدۃ، ج:16، ص38، ط:دار المعرفة) (6)أَخَذَ الْمُشْرِكُونَ عَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ فَلَمْ يَتْرُكُوهُ حَتَّى سَبَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَذَكَرَ آلِهَتَهُمْ بِخَيْرٍ ، ثُمَّ تَرَكُوهُ . فَلَمَّا أَتَى رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ : مَا وَرَاءَكَ؟ . قَالَ : شَرٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؛ مَا تُرِكْتُ حَتَّى نِلْتُ مِنْكَ ، وَذَكَرْتُ آلِهَتَهُمْ بِخَيْرٍ ؟! قَالَ : كَيْفَ تَجِدُ قَلْبَكَ ؟ . قَالَ : مُطْمَئِنًا بِالإِيمَانِ . قَالَ : إِنْ عَادُوا فَعُدْ . ٍرواه الحاكم في " المستدرك " ( 2 / 389 ) قال ابن حزم رحمه الله : " اتَّفقُوا على أَن الْمُكْره على الْكفْر وَقَلبه مطمئن بالايمان انه لَا يلْزمه شَيْء من الْكفْر عِنْد الله تَعَالَى .. " انتهى . "مراتب الإجماع" (61) . وينظر : "الإقناع في مسائل الأجماع" لابن القطان (2/272) (7) الأجرة انما تكون في مقابلة العمل( شامي: كتاب النكاح: 307/4،زكريا) او خياطا امره ان يتخذ له ثوبا على زي الفساق يكره له ان يفعله لانه سبب التشبه بالمجوس والفسقة ( شامي: كتاب الحظر والاباحة:562/9،ط.زكريا) وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15) لو اجره دابة لينقل عليها الخمر او اجره نفسه ليرعى له الخنازير يطيب له الاجر وعنده وعندهما يكره( شامي: كتاب الحظر والاباحة: 562/9) ( فَمَنِ ٱضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغࣲ وَلَا عَادࣲ فَلَاۤ إِثۡمَ عَلَیۡهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورࣱ رَّحِیمٌ ( سورة البقرة:173) قال أبو بكرٍ الجَصَّاصُ: (هذا أصلٌ في جوازِ إظهارِ كَلِمةِ الكُفرِ في حالِ الإكراهِ ( احكام القرآن: 192/3) (9) عن عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..( صحيح البخاري: 1) وان استاجره لينحت له طنبورا او بربطا ففعل طاب له الاجر الا انه ياثم به.( هندية: 450/4،زكريا) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) (10) عن علي رضي الله عنه: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ (بخاري: 4340، مسلم: 1840) (11)قُلۡ أَطِیعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا یُحِبُّ ٱلۡكَـٰفِرِینَ ( سورة ال عمران: 32)
বিস্তারিত পড়ুন

সরকারি চাকরির বিধানঃ ১ম পর্ব

Hm Sulayman

১১ মে, ২০২৫

আমাদের কাছে প্রায়ই একটি প্রশ্ন এসে থাকে যেঃ সরকারি চাকরির বিধান কি? অর্থাৎ সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করা যেমন ওকালতি করা, ব্যারিস্টার হওয়া, পুলিশ বিভাগের চাকরি করা, সামরিক বিভাগের চাকরি করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের চাকরি করা। মোটকথা কোন ব্যক্তি যদি সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করে তাহলে ওই চাকরি করা তার জন্য জায়েজ হবে নাকি জায়েজ হবে না! এবং তার বেতন হালাল নাকি হারাম? আল্লাহ চাইলে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এই আর্টিকেল পড়ার আগে আমরা একটা মূলনীতি মাথায় রাখি যে, আমাদের আলোচ্য বিষয় হল এমন রাষ্ট্রের সরকারি পদে চাকরি করা নিয়েঃ যে রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্র নয় তথা রাষ্ট্রপ্রধান বাস্তবিক পক্ষে মুসলমান নয় এবং সেই দেশ ইসলামী আইন অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে না। সেই দেশের সরকারি চাকরি নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আলোচনা করব নতুবা ইসলামের রাষ্ট্রে সরকারি পদে চাকরি করতে কোন বাধা নেই। ভূমিকাঃ এজন্য সবার আগে আমাদেরকে জানতে হবে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামের রাষ্ট্র কোনটি এবং কুফরি রাষ্ট্র কোনটি! মুলত কোন দেশ দারুল ইসলাম নাকি দারুল হারব তথা দারুল কুফর হওয়া বা না হওয়ার মৌলিক প্রধান মাপকাঠি হলোঃ ঐ দেশ বা ভূখণ্ডে বাস্তবায়িত প্রচলিত আইন এবং সংবিধান। তাই কোন দেশ যদি ইসলামী নীতিমালা এবং শরয়ী আইন অনুযায়ী চলে, তাহলে সেটি দারুল ইসলাম তথা ইসলামি রাষ্ট্র বলে গণ্য হবে। যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী অথবা অধিকাংশ অমুসলিম অল্পকিছু মুসলিম। জনসংখ্যার কমবেশি এটা কোন প্রভাব ফেলবে না। সেটি ইসলামি রাষ্ট্র বলেই গণ্য হবে। আর যদি কুফুরি আইন এবং সংবিধানে দেশ পরিচালিত হয়, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো যদি কুফুরি নীতিমালার আলোকে গৃহীত হয় তাহলে সেটি দারুল হারব তথা দারুল কুফর; কাফের রাষ্ট্র! যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী হোক, এসবে কোন প্রভাব ফেলবে না। এটিই হানাফি মাজহাবসহ বাকি ইমামদের ফতোয়া। যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ আরো অতিরিক্ত দুটি শর্ত করেছেন। কিন্তু ফতোয়া সাহেবাইনের উপর। ইমাম জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ حُكْمُ الدَّارِ إِنَّمَا يَتَعَلَّقُ بِالظُّهُوْرِ وَالْغَلَبَةِ، وَإِجْرَاءِ حُكْمِ الدِّيْنِ بِهَا، وَالدَّلِيْلُ عَلَى صِحَّةِ ذَلِكَ: أَنَّا مَتَى غَلَبْنَا عَلَى دَارِ الْحَرْبِ، وَأَجْرَيْنَا أَحْكَامَنَا فِيْهَا: صَارَتْ دَارَ الْإِسْلَامِ، سَوَاءٌ كَانَتْ مُتَاخِمَةً لِدَارِ الْإِسْلَامِ أَوْ لَمْ تَكُنْ، فَكَذَلِكَ الْبَلَدُ مِنْ دَارْ الْإِسْلَامْ، إِذَا غَلَبَ عَلَيْهِ أَهْلُ الْكُفْرِ، وَجَرَى فِيْهِ حُكْمُهُمْ: وَوَجَبَ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْحَرْبِ. وَلَا مَعْنَى لِاِعْتِبَارِ بَقَاءِ ذِمِّيٍّ أَوْ مُسْلِمٍ آَمِنًا عَلَى نَفْسِهِ؛ لِأَنَّ الْمُسْلِمَ قَدْ يَأْمَنُ فِيْ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يَسْلِبُهُ ذَلِكَ حُكْمَ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يُوْجِبُ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْإِسْلَامِ. ‘ কোন দেশের হুকুম বা বিধান এটি বিজয়, কর্তৃত্ব ও কোনো ধর্মের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সাথে সম্পর্কিত। এ দাবির পক্ষে দলিল হলো, আমরা যখন “দারুল হারব” এর ওপর বিজয়ী হই এবং তথায় আমাদের শাসনব্যবস্থা চালু করি, তখন সেটা “দারুল ইসলাম” হয়ে যায়; চাই সে রাষ্ট্রটি কোনো “দারুল ইসলাম” এর সংলগ্ন হোক বা না হোক। তাহলে অনুরূপ “দারুল ইসলাম”-এর কোনো শহরের ওপর যখন কাফিররা বিজয়ী হবে এবং তথায় তাদের কুফরি শাসনব্যবস্থা চালু হবে, তাহলে সেটা অবশ্যই “দারুল হারব”-এ পরিণত হয়ে যাবে। মুসলিম ও জিম্মিদের পূর্বের নিরাপত্তাচুক্তিতে তাদের নিরাপদ থাকাকে বিবেচনা করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই। কেননা, মুসলমানও তো কখনও কখনও “দারুল হারব”-এ নিরাপদ থাকে; অথচ এর কারণে এটা রাষ্ট্রকে “দারুল হারব” হওয়া থেকে বের করে দেয় না এবং “দারুল ইসলাম”-এ রূপান্তরিত হয়ে যাওয়াকে আবশ্যক করে না।’ (শারহু মুখতাসারিত তাহাবি : ৭/২১৬-২১৭, প্রকাশনী : দারুল বাশাইরিল ইসলামিয়্যা, বৈরুত) ২. ইমাম সারাখসি রহ. স্বীয় ‘মাবসুত’-এ সাহিবাইনের-এর পক্ষ থেকে দলিল দিয়ে বলেনঃ الْبُقْعَة إنَّمَا تُنْسَبُ إلَيْنَا أَوْ إلَيْهِمْ بِاعْتِبَارِ الْقُوَّةِ وَالْغَلَبَةِ، فَكُلُّ مَوْضِعٍ ظَهَرَ فِيهِ حُكْمُ الشِّرْكِ فَالْقُوَّةُ فِي ذَلِكَ الْمَوْضِعِ لِلْمُشْرِكِينَ فَكَانَتْ دَارَ حَرْبٍ، وَكُلُّ مَوْضِعٍ كَانَ الظَّاهِرُ فِيهِ حُكْمُ الْإِسْلَامِ فَالْقُوَّةُ فِيهِ لِلْمُسْلِمِينَ. ‘স্থান আমাদের (মুসলমানদের) সাথে বা তাদের (কাফিরদের) সাথে সম্পৃক্ত হয় শক্তি ও বিজয়ের ভিত্তিতে। অতএব, যে জায়গায় শিরকের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুশরিকদের শক্তি বিজয়ী; বিধায় সেটা হবে “দারুল হারব”। আর যে জায়গায় ইসলামের সংবিধান বিজয়ী থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুসলমানদের শক্তি বিজয়ী।’ (আল-মাবসুত, সারাখসি : ১০/১১৪, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত) অনেকের সন্দেহ হতে পারে যে, তাহলে অনেক দেশে দেখা যায় অর্থাৎ অনেক রাষ্ট্রে দেখা যায়, যেই রাষ্ট্রের সংবিধান কুফুরী নীতিমালা ( যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র) অনুযায়ী পরিচালিত হয় সেখানে মুসলমানরা ঈদের নামাজ জুমার নামাজ সহ তারা তাদের দৈনন্দিন আমলী জিন্দেগী পালন করতে পারে; তাহলে সেটা কিভাবে কাফের রাষ্ট্র হতে পারে সেটা তো ইসলামের রাষ্ট্র হওয়ার কথা। একথা বুঝতে হবে যে ব্যক্তিগত সামান্য কিছু ইবাদত পালন করার সুযোগ পাওয়ার দ্বারাই কোন দেশ দারুল ইসলাম হয়ে যায় না। ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যায় না। বরং দেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধান এবং নিয়ম-নীতি সম্পূর্ণ ইসলামী হওয়াটা আবশ্যক। হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহি রাহিমাহুল্লাহ তিনি বলেনঃ ইসলামী রাষ্ট্র এবং কুফুরি রাষ্ট্রের মাসআলা যখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এখন নিজেই হিন্দুস্তানের ব্যাপারে চিন্তা করে দেখুন! এখানে খ্রিস্টান কাফেরদের আইন-কানুন কিভাবে শক্তি ও কর্তৃত্বের সঙ্গে জারি আছে! একজন সাধারন ডেপুটি কমিশনারও যদি আদেশ করে যে মসজিদে জামাত করোনা, তাহলে ধনী গরিব কেউই আদায় করে দেখাতে সক্ষম নয়। আর এই যে জুমা, দুই ঈদ ও কিছু ফিকহি মাসআলা অনুযায়ী আমল চলছে তা শুধুমাত্র তাদের আইনের কারণে। তারা প্রজাদের জন্য ফরমান জারি করেছে যে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী চলবে, সরকার তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। (তালিফাতে রশিদিয়া: পৃষ্ঠাঃ ৬৬৭ ) এজন্য সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহিমাহুল্লাহ তিনি বলেন যেঃ হিন্দুস্তান দারুল হারব এবং তা ততদিন পর্যন্ত দারুল হারব হিসেবে পরিগণিত হবে, যতদিন তাতে কুফুরের কর্তৃত্ব বিদ্যমান থাকবে। আর দারুল হারবের যত ধরনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং যত শর্তের কথা বলা হয়ঃ সবগুলোই এই হিন্দুস্থানে বিদ্যমান। ( মাকতুবাতে শাইখুল ইসলামঃ ২/১১৫) এইজন্য শুধু ৭০% অথবা ৯০% মুসলিম দেখলেই এটা ভেবে বসার অবকাশ নেই যে সেটি ইসলামী রাষ্ট্র! রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করলেও দেশ যদি কুফুরি সংবিধান অনুযায়ী চলে তাহলে মাজহাবের ইমামগনের মতে সেটি দারুল হারব বলেই বিবেচিত হবে। আর আমাদের আলোচ্য মাসআলাও দারুল হারবকে কেন্দ্র করে। কেননা স্বাভাবিকভাবেই দারুল ইসলামে সরকারি চাকুরি করা জায়েজ। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রে সরকারি পদ কোন অবৈধ কাজের জন্য নয়। নোটঃ বারবার পড়ুন। আয়ত্ব করুন। মাসআলা বুঝার জন্য এটি খুবই জরুরী।
বিস্তারিত পড়ুন

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সত্যিই ৬ জন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন!

Hm Sulayman

১১ মে, ২০২৫

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সত্যিই ৬ জন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন! আসুন বিষয়টি নিয়ে আমরা একটু আলোচনা করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বীকৃত স্ত্রীদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আম্মাজান হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক্ব দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামকে প্রেরণ করেন যেন নবীজি আম্মাজান হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে ফিরিয়ে নেন। ওহীর বার্তা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মাজানকে ফিরিয়ে নেন। (১) নবীজির স্বীকৃত স্ত্রীর মোট সংখ্যা ১১ জন। (২) উনি ছাড়া নবীজি উম্মাহাতুল মু'মিনিন তথা স্বীকৃত স্ত্রীদের মধ্য হতে আর অন্য কোন স্ত্রীকে তালাক দেননি। তাছাড়া হযরত হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক দিয়েছেন বিশেষ কারণে। এমনি এমনিই তালাক দেননি। বিশেষ কারণ ছিলো। তালাক জিনিসটি অত্যন্ত ঘৃণীত। খোদ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যেঃ أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلَاقُ ".অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নিকট জায়েজ বা হালাল কাজের মধ্য হতে সবচাইতে নিকৃষ্টতম হালাল কাজ হচ্ছে তালাক দেয়া। (৩) তাই নবীজির তালাক দেয়া আর আমাদের তালাক দেয়ার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। বাকি নবীজির জন্য অনেক মহিলা নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, কোন কোন মহিলার ব্যাপারে নবীজি নিজেও বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, এবং বিবাহ সংঘটিতও হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে মিলিত হননি এবং বিশেষ কারণবশত তাদেরকে তালাক প্রদান করে তাদের মোহর আদায় করে বিদায় দিয়েছেন। এই প্রকার মহিলাদের সংখ্যার বর্ণনার ব্যাপারে একাধিক বর্ণনা এসেছে। সব বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন আসমা বিনতে নোমান, ফাতেমা বিনতে যাহহাক, উমায়্যা বিনতে শারাহিল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্না প্রমুখ মহিলাগন প্রসিদ্ধ। (৪) এরকম মহিলার বর্ণনা কোন কোন বর্ণনায় ৩০ জন মহিলার কথাও এসেছে! অবশ্য ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ উক্ত সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন আল্লামা দিময়াতি রাহিমাহুল্লাহ এর উদ্ধৃতি বর্ণনা করে। তবে ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ এমন তালাকপ্রাপ্তা মহিলার সংখ্যা বর্ণনা করে বলেছেন যেঃ প্রসিদ্ধ এরকম ৪ জন অথবা ৫ জন মহিলার কথা জানা যায়, যাদেরকে রাসুল বিবাহ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়া ব্যতিরেকেই তাদেরকে তালাক দিয়েছেন। (৫) আল্লামা ইবনে আবদুল বার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ যেসমস্ত মহিলাকে নবীজি বিবাহ করেছেন অথচ মিলিত হননি, অথবা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, এসবের সংখ্যার ব্যাপারে প্রচুর মতপার্থক্য আছে। অনুরুপভাবে তাদের তালাক দেয়ার কারণের ব্যাপারেও প্রচুর পরিমান ইখতিলাফ আছে। সুতরাং উক্ত নারীদের কারোর ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে কোন কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। (৬) ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এই যেসমস্ত কথা আমি উক্ত নারীদের ব্যাপারে বর্ণনা করলাম, তা শুধুমাত্র আমি আমার বিস্ময় প্রকাশের জন্য করেছি, সংখ্যাগুলো সঠিক প্রমাণের জন্য নয়। ( অর্থাৎ এমন নারীদের ব্যাপারে এত অধিক বর্ণনা আছে, যে আমি বিস্ময় প্রকাশের জন্য সংখ্যাগুলো বর্ণনা করেছি।) (৭) ইমাম সালেহি রাহিমাহুল্লাহ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ" এর মধ্যে এই ইখতিলাফ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। (৮) উল্লেখ্য যেঃ এই সমস্ত মহিলাগন উম্মুল মুমিনিনের অন্তর্ভুক্ত তথা স্বীকৃত স্ত্রীর অন্তর্ভুক্ত নন। উম্মুল মু'মিনিন বলা হয় যাদের সঙ্গে বিবাহ সংঘটিত হয়েছে, এবং তাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন; যদিও কাউকে তালাক দিয়ে থাকেন। ইমাম মাওয়ারদি রাহিমাহুল্লাহ এবং আল্লামা কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ এটাই বলেছেন। (৯) এখন মুল আলোচনায় আসিঃ নবীজি নিজের স্বীকৃত স্ত্রীদের মধ্য থেকে শুধু হযরত হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক দিয়েছেন। সেটাও নবীজি একটি শরয়ী কারণে তালাক দিয়েছেন। একটি গোপনীয়তা প্রকাশের কারণে। (১০) নবীজি অন্য কোন স্ত্রীকে তালাক দেননি তথা উম্মাহাতুল মু'মিনিনের মধ্য হতে। যাদেরকে তালাক দিয়েছেন, তারা উম্মাহাতুল মু'মিনিন নন। নবীজির মূল স্ত্রীর মধ্যে তাদেরকে গননা করা হয় না। (১১) এখন কোন ব্যক্তি যদি একাধিক বিবাহ করে, আর তালাক দেয়, সেটা যে কারণেই হোক না কেন; তাহলে তার তালাক প্রদানের দলীলের বৈধতা বা যৌক্তিতা হিসেবে নবিজির তালাক প্রদানের কথা এভাবে সামনে আনতে হবে? তালাক দেয়াটা কি গর্বের বিষয়? এটি কি ফলাও করে মিডিয়ায় প্রচারের মত বিষয়? স্বয়ং আল্লাহর কাছে এটি সবচাইতে অপছন্দের জিনিস। সেটাকে গর্বের সঙ্গে প্রচার করার যৌক্তিকতা কোথায়? নবীজি নিজেও তালাকের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। সেখানে নিজের তালাকের জাস্টিফাই করতে ভুল তথ্য দিয়ে নবীজির তালাক সামনে আনাটা গাইরতহীন ব্যক্তির পরিচয়। নিজের এহেন কাজ ভ্যালিড করার জন্য নবীজির যে কোন কাজকে নিজের কাজের দলিল বানাতে হবে? নবিজীর শানে কথা বলতে কতটা সতর্ক হওয়া উচিত? তার শানে যেন গোস্তাখী না হয় কতটা সতর্ক হওয়া দরকার সেটা কি কোন ভাই বুঝবেন না? তালাক শব্দটি এমনিতেই ঘৃণীত, অপছন্দনীয়। সেখানে নিজের কাজের ডিফেন্স করতে যেয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে একথা বলে দেয়া যেঃ নবীজিও ৬ টি তালাক দিয়েছেন, এমন কথা নিঃসন্দেহে বেয়াদবি। স্ত্রীদের মধ্য হতে শুধু হযরত হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক দিয়েছেন, যিনি স্বীকৃত মুল স্ত্রী। যার সঙ্গে ঘর সংসার করেছেন। আর বাকি যেসব মহিলার বর্ণনা সে ব্যাপারে প্রথম কথা হলোঃ সেসমস্ত বর্ননাগুলো ইখতিলাফে ভরপুর। চুপ থাকতে বলা হয়েছে। সুনিশ্চিত কোন কথা বলা নিষেধ। তাহলে কি কোন ব্যক্তির এই অধিকার আছে যে বলবে আমি ৭ জনকে তালাক দিয়েছি, আমার নবীও ৬ জনকে তালাক দিয়েছেন! দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছেঃ এমন মহিলাদের সঙ্গে তিনি কোনরুপ ঘর সংসারই করেননি। রাত যাপন করেননি, মিলিত হননি। তারা তো মুল স্ত্রীর অধিকারই অর্জন করেননি, তাহলে ঢালাওভাবে তাদেরকেও রাসুলের স্ত্রী গন্য করে ৬ তালাক সংখ্যা নির্ধারণ করাটা কি ইনসাফ? আর এই তালাকপ্রাপ্তা বা তালাক দেয়ার সংখ্যা কোন কিতাবেই চূড়ান্তভাবে বর্ণিত নেই। তাহলে সেই সংখ্যাকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজের কাজের সাফাই গাওয়ার জন্য রেফারেন্স হিসেবে পেশ করা এটা কতটুকু সমীচিন? নিঃসন্দেহে এমন কথা আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। এটা কোনরুপ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ছাড়াই বর্ণনা করাটা বেয়াদবি। আল্লাহ আমাদের বাড়াবাড়ি এবং বিকৃতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন। রেফারেন্সঃ (১) মুসতাদরাকে হাকেম: ৬৭৫৩ عَنْ قَيْسِ بْنِ زَيْدٍ: " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَلَّقَ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ، فَدَخَلَ عَلَيْهَا خَالَاهَا ، فَبَكَتْ وَقَالَتْ: وَاللَّهِ مَا طَلَّقَنِي عَنْ شِبَعٍ، وَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: ( قَالَ لِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ: رَاجِعْ حَفْصَةَ، فَإِنَّهَا صَوَّامَةٌ قَوَّامَةٌ، وَإِنَّهَا زَوْجَتُكَ فِي الْجَنَّةِ (২) মুসলিম শরিফ: ১৪৬২ عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: ( كَانَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعُ نِسْوَةٍ، فَكَانَ إِذَا قَسَمَ بَيْنَهُنَّ، لَا يَنْتَهِي إِلَى الْمَرْأَةِ الْأُولَى إِلَّا فِي تِسْعٍ ... ) আল মুকাদ্দিমাতুল মুমাহহিদাত: ৩/৩৫৮: فهؤلاء أزواجه اللواتي لم يُختلف فيهن، فحصل العلم بنقل التواتر بهن، وهن إحدى عشرة امرأة، منهن ست من قريش: خديجة، وسودة، وعائشة، وحفصة، وأم سلمة، وأم حبيبة . وأربع من العرب: زينب بنت خزيمة، وزينب بنت جحش، وجويرية، وميمونة؛ وواحدة من بني إسرائيل: وهي صفية. توفي منهن اثنتان في حياته: خديجة أول نسائه، وزينب بنت خزيمة. وتوفي صلّى اللّه عليه وسلّم عن التسع الباقيات " انتهى. (৩) আবু দাউদ: ২১৭৮ عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلَاقُ ". (৪) বুখারি: ৫২৫৪, ৫২৫৫, ৫২৫৬, وعَنْ عَبَّاسِ بْنِ سَهْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، وَأَبِي أُسَيْدٍ، قَالاَ: ( تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمَيْمَةَ بِنْتَ شَرَاحِيلَ، فَلَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَيْهِ بَسَطَ يَدَهُ إِلَيْهَا، فَكَأَنَّهَا كَرِهَتْ ذَلِكَ ، فَأَمَرَ أَبَا أُسَيْدٍ أَنْ يُجَهِّزَهَا وَيَكْسُوَهَا ثَوْبَيْنِ رَازِقِيَّيْنِ فعَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: ( أَنَّ ابْنَةَ الجَوْنِ، لَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَنَا مِنْهَا، قَالَتْ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ، فَقَالَ لَهَا: لَقَدْ عُذْتِ بِعَظِيمٍ، الحَقِي بِأَهْلِكِ ) رواه البخاري وعَنْ أَبِي أُسَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: ( خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْطَلَقْنَا إِلَى حَائِطٍ يُقَالُ: لَهُ الشَّوْطُ، حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى حَائِطَيْنِ، فَجَلَسْنَا بَيْنَهُمَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اجْلِسُوا هَا هُنَا! وَدَخَلَ، وَقَدْ أُتِيَ بِالْجَوْنِيَّةِ، فَأُنْزِلَتْ فِي بَيْتٍ فِي نَخْلٍ فِي بَيْتِ أُمَيْمَةَ بِنْتِ النُّعْمَانِ بْنِ شَرَاحِيلَ، وَمَعَهَا دَايَتُهَا حَاضِنَةٌ لَهَا، فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: هَبِي نَفْسَكِ لِي، قَالَتْ: وَهَلْ تَهَبُ المَلِكَةُ نَفْسَهَا لِلسُّوقَةِ؟ قَالَ: فَأَهْوَى بِيَدِهِ يَضَعُ يَدَهُ عَلَيْهَا لِتَسْكُنَ، فَقَالَتْ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ، فَقَالَ: قَدْ عُذْتِ بِمَعَاذٍ، ثُمَّ خَرَجَ عَلَيْنَا فَقَالَ: يَا أَبَا أُسَيْدٍ! اكْسُهَا رَازِقِيَّتَيْنِ، وَأَلْحِقْهَا بِأَهْلِهَا ) رواه البخاري (৫) যাদুল মাআদ: ১/১১০ فهؤلاء نساؤه المعروفات اللاتي دخل بهن، وأما من خطبها ولم يتزوجها، ومن وهبت نفسها له ولم يتزوجها، فنحو أربع أو خمس .وقال بعضهم: هن ثلاثون امرأة، وأهل العلم بسيرته وأحواله صلى الله عليه وسلم لا يعرفون هذا، بل ينكرونه " انتهى، من "زاد المعاد" (1 / 110) (৬) আল ইস্তিআব: ১/৪৬ وقال ابن عبد البر رحمه الله تعالى: " وأما اللواتي اختلف فيهن ممن ابتنى بها وفارقها ، أو عقد عليها ولم يدخل بها، أو خطبها ولم يتم له العقد منها، فقد اختلف فيهن، وفي أسباب فراقهن اختلافًا كثيرًا ، يوجب التوقف عن القطع بالصحة في واحدة منهن " انتهى، من "الاستيعاب" (1 / 46) (৭) সিয়ারু আলামিন নুবালা: ২/৪৯৫ قال الذهبي رحمه الله تعالى بعد أن ذكر جملة من هذه الروايات: " هذا ونحوه إنما أوردته للتعجب لا للتقرير " انتهى، من "سير أعلام النبلاء" (سيرة2 / 495) (৮) সুবুলুল হুদা: ১১/২২১ باب الرابع عشر في ذكر من عقد عليها ولم يدخل بها صلى الله عليه وسلم.. علي خلاف في بعضهن، هل هي ممّن عقد عليها أم لا؟ والكلام في ذلك طويل الذّيل، والخلاف فيه منتشر، حتى قال في زاد المعاد بعد أن ذكر النسوة اللاتي دخل بهن: وأما من خطبها ولم يتزوّج بها فنحو أربع أو خمس. قال الحافظ الدّمياطي: هن ثلاثون امرأة، وأهل السير وأحواله لا يعرفون هذا بل ينكرونه، والمعروف عندهم أنه بعث إلى الجونيّة ليتزوّجها، فدخل عليها ليخطبها، فاستعاذت منه، فأعاذها ولم يتزوّجها، وكذلك الكلابيّة، وكذلك من رأى بكشحها بياضا، فلم يدخل بها، والّتي وهبت نفسها له فزوّجها غيره على سور من القرآن، هذا هو المحفوظ، وإذا علم ذلك فأذكر ما وقفت عليه منهنّ. (৯) কুরতুবি: ১৭/২১১ فَأَمَّا زَوْجَاتُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اللَّاتِي فَارَقَهُنَّ فِي حَيَاتِهِ مِثْلُ الْكَلْبِيَّةِ وَغَيْرِهَا، فَهَلْ كَانَ يَحِلُّ لِغَيْرِهِ نِكَاحُهُنَّ؟ فِيهِ خِلَافٌ. وَالصَّحِيحُ جَوَازُ ذَلِكَ، لِمَا رُوِيَ أَنَّ الْكَلْبِيَّةَ الَّتِي فَارَقَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَت بغيره وَلَمْ يُنْكِرْ ذَلِكَ أَحَدٌ، فَدَلَّ عَلَى أَنَّهُ إجماع" انتهى بتصرف يسير، م "تفسير القرطبي" (17/211) . ইবনে কাসির: ৬/৩৮০ قال ابن كثير: " وقوله: ( وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ ) أي: في الحرمة والاحترام، والإكرام والتوقير والإعظام، ولكن لا تجوز الخلوة بهن، ولا ينتشر التحريم إلى بناتهن وأخواتهن بالإجماع " انتهى، من " تفسير ابن كثير" (6 / 380 - 381). (১০) কুরতুবি: ১৮/১৪৮ وذكر القرطبي في تفسيره عن الكلبي قال: سبب نزول هذه الآية غضب رسول الله صلى الله عليه وسلم على حفصة لما أسر إليها حديثا فأظهرته لعائشة، فطلقها تطليقة، فنزلت الآية وهي قوله تعالى: يا أيها النبي إذا طلقتم النساء فطلقوهن لعدتهن. (১১) কুরতুবি: ১৭/২১১ فَأَمَّا زَوْجَاتُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اللَّاتِي فَارَقَهُنَّ فِي حَيَاتِهِ مِثْلُ الْكَلْبِيَّةِ وَغَيْرِهَا، فَهَلْ كَانَ يَحِلُّ لِغَيْرِهِ نِكَاحُهُنَّ؟ فِيهِ خِلَافٌ. وَالصَّحِيحُ جَوَازُ ذَلِكَ، لِمَا رُوِيَ أَنَّ الْكَلْبِيَّةَ الَّتِي فَارَقَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَت بغيره وَلَمْ يُنْكِرْ ذَلِكَ أَحَدٌ، فَدَلَّ عَلَى أَنَّهُ إجماع" انتهى بتصرف يسير، م "تفسير القرطبي" (17/211)
বিস্তারিত পড়ুন

শবে বরাতের তাৎপর্য, ফজীলত ও আমল

Hm Sulayman

৯ মে, ২০২৫

শবে বারাআত বা লাইলাতুল বারাআতকে হাদীস শরীফে “লাইলাইতুন নিসফি মিন শা‘বান” নামে উল্লেখ করা হয়েছে। আর উক্ত রাতের ফজীলতের দিকে খেয়াল করে উলামায়ে উম্মত এ রাতকে “লাইলাতুল বারাআত” নামকরণ করেছেন। এর অর্থঃ লাইলাতুল বারাআতি মিনাজ জুনূব অর্থাৎ গুনাহ থেকে মুক্তির রাত। যেমনিভাবে “তারাবীহ নামায” নামের কোন উল্লেখ হাদীস শরীফে নেই, হাদীস শরীফে উক্ত নামাযকে “কিয়ামুল লাইল ফী রামাজান” বলা হয়েছে এবং উক্ত নামায সকল মুসলমানের জন্য পালনীয়, তেমনিভাবে শবে বারাআত নাম উল্লেখ না থাকলেও লাইলাতুন নিসফি মিন শা‘বান নামে উক্ত রাতের ফজীলত ও আমলের কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হওয়ায় তা মুসলমানদের জন্য পালনীয় হবে। লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআতের ফজীলত ও আমলের বিষয় সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তেমনি এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল হাদীসের সমষ্টি এ রাতের বিশেষ ফজীলতের বিষয়কে প্রমাণিত করে। তাই একে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। শবে বারাআত সম্পর্কে নিম্নে সহীহ হাদীস উল্লেখ করা হলোঃ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ رضي الله عنه ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ صلي الله عليه وسلم ﻗﺎﻝ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শা‘বানের রাতে (শা‘বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত শবে বারাআতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৬৫/ সুনানে বাইহাকী--শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৮৩৩/ মু‘জামে তাবরানী, কাবীর, হাদীস নং ৩৫৪৩) উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান (রহ.) তার ‘কিতাবুস সহীহ’ গ্রন্থে (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামে প্রসিদ্ধ এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাদীসটির সনদ সহীহ বলেই তিনি একে তাঁর কিতাবুস সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ বা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার। তাই ইমাম মুনযিরী, আল্লামা ইবনে রজব, আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে গ্রহণীয় ও আমলযোগ্য বলেছেন। (বিস্তারিত দেখুন : আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ২য় খণ্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা/ মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ, ৮ম খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা/ শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা, ১০ম খণ্ড, ৫৬১ পৃষ্ঠা) শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এ হাদীসকে সহীহ বলে গণ্য করে তার “সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা” গ্রন্থের ৩য় খণ্ড-১৩৫ পৃষ্ঠায় এ হাদীসকে স্থান দিয়েছেন এবং এর সমর্থনে আরো ৮টি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন-- ﻭﺟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺑﻤﺠﻤﻮﻉ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﺻﺤﻴﺢ ﺑﻼﺭﻳﺐ ﻭﺍﻟﺼﺤﺔ ﺗﺜﺒﺖ ﺑﺄﻗﻞ ﻣﻨﻬﺎ ﻋﺪﺩﺍ ﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﺳﺎﻟﻤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻀﻌﻒ ﺍﻟﺸﺪﻳﺪ ﻛﻤﺎﻫﻮ ﺍﻟﺸﺄﻥ ﻓﻰ ﻫﺬﺍﺍﻟﺤﺪﻳﺚ “সারকথা হলো, এ হাদীসটি এ সকল রিওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে নিঃসন্দেহে সহীহ। আর কোন হাদীস সহীহ হওয়া তো এর চেয়ে কমসংখ্যক রিওয়ায়াতের সমষ্টিতেই হয়ে যায় যখন তা প্রচণ্ড দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকে--যেমন অবস্থা এ হাদীসের ক্ষেত্রে।” (সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৮ পৃষ্ঠা) অধিকন্তু আলবানী সাহেব সেখানে ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করে শক্ত প্রতিবাদ করেছেন, যারা কোন ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বারাআতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই। (সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা) বলা বাহুল্য, শবে বারাআতের ব্যাপারে যদি শুধু এ হাদীসটিই থাকতো এবং অন্য কোন হাদীস না থাকতো, তবুও এ হাদীস দ্বারাই শবে বারাআত প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কারণ, এটা নির্ভরযোগ্য সহীহ হাদীস। তারপরও আমরা দেখতে পাই, এ রাতের ফজীলত সম্পর্কে আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্য থেকে আলবানী সাহেব ৮টি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো জয়ীফ হলেও প্রচণ্ড ধরনের জয়ীফ নয়। তাই এগুলোর সপক্ষে উল্লিখিত হাদীস বিদ্যমান থাকায় এগুলো প্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। উল্লিখিত সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বারাআতের ফজীলত ও আমল উভয়ই প্রমাণিত হয়। কেননা, যখন এ হাদীসে শবে বারা্আতে বান্দাদেরকে ক্ষমা করার ঘোষণা দেয়া হলো, সুতরাং সেই ক্ষমা লাভের জন্য অবশ্যই তাদের এর উপযুক্ত আমল করা কর্তব্য। শবে বরাতের আমলঃ এ রাতের আমল সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা সম্বলিত নির্ভরযোগ্য হাদীসও রয়েছে। যেমন, এ সম্পর্কে একটি নির্ভরযোগ্য হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো-- عن عائشة بنت أبي بكر قالت قام رسول الله صلي الله عليه وسلم من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيت ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت فلما رفع إلي رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال يا عائشة أظننت أن النبي قد خاس بك؟ قلت لا والله يا رسول الله ولكنني ظننت أنك قبضت لطول سجودك فقال أتدرين أي ليلة هذه؟ قلت الله ورسوله أعلم قال هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم হযরত আয়িশা বিনতে আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)নামাযে দাঁড়ালেন। তখন তিনি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা করলাম--তাঁর প্রাণবিয়োগ হয়েছে। যখন আমি তা ভাবলাম, তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাতে তা নড়ে ওঠলো। তখন আমি ফিরে এলাম। এরপর যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম--না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনার প্রাণবিয়োগ হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান--এটা কোন্ রাত? আমি বললাম--আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন-- “এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত শবে বারাআত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শাবানের রাতে স্বীয় বান্দাদের প্রতি নিবেশন করেন। অতঃপর তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদেরকে ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদেরকে অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে তাদের বদকর্মের কারণে ফিরিয়ে দেন।” (বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮২ পৃষ্ঠা) এ হাদীসটিও নির্ভরযোগ্য। ইমাম বাইহাকী (রহ.) এ হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেন-- ﻫﺬﺍ ﻣﺮﺳﻞ ﺟﻴﺪ “এই হাদীসটি উত্তম সনদের মুরসাল হাদীস।” (বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা) এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো, শবে বারাআতে নফল নামায পড়া এবং তাকে এভাবে দীর্ঘ করা, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে--এটা মাসনূন আমল। আবার সুনানে ইবনে মাজাহর এক হাদীসে রাতে নফল নামায পড়া ও নফল ইবাদত করার সাথে পরদিন রোযা রাখার নির্দেশনাও বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো-- عن علي بن أبي طالب ﺭﺿﻰ الله ﻋﻨﻪ قال قال رسول الله ذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا، فيقول ألا من مستغفر فأغفر له، ألا مسترزق فأرزقه، ألا مبتلى فأعافيه، ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--“মধ্য-শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। কেউ আছে কি আপদগ্রস্ত? তাকে আমি নিষ্কৃতি দান করব।আছে কি এমুক, আছে কি ওমুক--এভাবে আল্লাহ তা‘আলা আহবান সুবহে সাদিক পর্যন্ত ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪) এ হাদীসটি জয়ীফ। তবে এর সমর্থনে উপরে বর্ণিত সহীহ হাদীস থাকায় এটা গ্রহণযোগ্য। তা ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যহ রাতে প্রথম আসমানে এসে বান্দাদেরকে ঐরূপে আহবান করার ব্যাপারে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা এ হাদীসের বর্ণনাকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়াও শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং ১লা শা‘বান থেকে ২৭ই শা‘বান পযন্ত সবগুলো দিনই রোযা রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ফজীলতময়। শুধু কেবল রামাজানের ২/১ দিন আগে রোযা রেখে রামাজানকে এগিয়ে না এনে বিরতি দিয়ে রামাজানের রোযা সুন্দরভাবে রাখার জন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। তবে যাদের প্রতিমাসে এদিন রোযা রাখার অভ্যাস তাদের কথা ভিন্ন। শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এ দিন অনেকে রোযা রেখে থাকেন। এ সম্পর্কে একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজনঃ প্রতি চান্দ্র মাসে তিন দিন রোযা রাখা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন, সাহাবীগণকেও মাসে তিন দিন রোযা রাখতে বলতেন। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬০; ৭৬৩) সে হিসেবে মাসে তিন দিন রোযা রাখা সুন্নাত। এই তিন দিন মাসের শুরুতেও হতে পারে, মাঝেও হতে পারে, আবার শেষেও হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু হাদীসে স্পষ্ট আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিশেষভাবে মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ (যাকে আইয়ামে বীয বলা হয়) রোযা রাখতে বলেছেন। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৪৯; ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদীসের আলোচনা) এই হাদীসগুলোর ওপর ভিত্তি করে হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, যে তিন দিনের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, সেই তিন দিন রোযা রাখাই সর্বোত্তম। (দ্র. ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদীসের আলোচনা) সে হিসেবে প্রতি মাসের আইয়ামে বীযে রোযা রাখা সুন্নত। শাবান মাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শাবান মাসের আইয়ামে বীযে (১৩, ১৪, ১৫) রোযা রাখাও সুন্নত। ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ১৫ তারিখ রোযা রাখাও সুন্নত। বাকি থাকল একটি বর্ণনায় বিশেষভাবে ও পৃথকভাবে ১৫ শাবান রোযা রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সুনানে ইবনে মাজাহ, বর্ণনা ১৩৮৪) কিন্তু বর্ণনাটি শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল। শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল হওয়ার কারণে কেবল এই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ১৫ শাবানের রোযাকে পৃথকভাবে সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব মনে করা সঠিক নয় বলে মতামত দিয়েছেন মুহাক্কিক আলেমগণ। তবে, যেমনটি পূর্বে বলা হল, ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত―এ হিসেবে এই দিনের রোযাকে (১৩ ও ১৪ তারিখের রোযাসহ) নিঃসন্দেহে সুন্নত মনে করা যাবে। মোটকথা, সর্বাবস্থায় শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোযা রাখা যাবে। পূর্বের দুই দিন তথা ১৩ ও ১৪ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে তিন দিন রোযা রাখা যেমন যাবে, তেমনি পৃথকভাবে কেবল ১৫ তারিখও রোযা রাখা যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিন দিন রাখাই উত্তম। এমনিভাবে ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের একটি দিন হিসেবে ১৫ তারিখের রোযাকে সুন্নতও মনে করা যাবে। কিন্তু পৃথকভাবে শাবান মাসের ১৫ তারিখ বিশেষ একটি দিন, সে হিসেবে পৃথকভাবে এ দিনে রোযা রাখা সুন্নত―এমন ধারণা রাখা যাবে না। এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে, শবে বরাত-পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনেরো তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসূলের বিশাল ভাণ্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, ‘শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ’। সনদ ও বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতেই অনুচিত। তবে হাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, ‘রমযানের দু-একদিন পূর্বে রোযা রেখো না।’ যাতে রমযানের জন্য পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃর্স্ফূভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, শাবানের এই ১৫ তারিখ তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি এই দুই বিষয়কে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে সওয়াব পাবে। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও ইয়াওমে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যেকোনো দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে, ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোযা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনের পৃথক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।’ ―ইসলাহী খুতুবাত ৪/২৬৭-২৬৮ শবে বারাআতের বিশেষ আমল হিসেবে এ রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগী করা তথা নফল নামায পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাসবীহ-তাহলীল পড়া, দরূদ শরীফ পড়া ও ইস্তিগফার করা প্রভৃতি আমল মুস্তাহাব। আর পরদিন অথবা আগের দুইদিন সহ মোট তিনদিন রোযা রাখা এর সংশ্লিষ্ট উত্তম আমল। এ রাতে নফল নামায যার যতটুকু ইচ্ছা আদায় করতে পারে। এজন্য কোন সীমা নির্ধারিত নেই। আবার এ রাতের নামাযের জন্য কোন সূরাহও নির্দিষ্ট নেই যে, এই রাক‘আতে এই সূরাহ এতবার পড়তে হবে। তেমনি এ রাতের গোসলেরও কোন হুকুম নেই বা এমন কোন ফজীলত নেই যে, যত পানির ফোটা পড়বে, ততগুনাহ মাফ হবে। এ সবই গর্হিত বানোয়াট কথা। তেমনি এ রাত উদযাপনে বাড়াবাড়ি করা, হালুয়া-রুটি বিতরণ, মোমবাতি জ্বালানোর রুসম পালন ও পটকা ফুটানো গর্হিত কাজ। এ রাতের নফল আমলসমূহ বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাযতো পুরুষদের অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার, তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়া বাঞ্ছনীয়। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফে নেই। তাই শবে বারাআত উপলক্ষে মসজিদে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন বা সমারোহ বাঞ্ছনীয় নয়। তেমনি দলবদ্ধ হয়ে এ রাতে কবরস্তান যিয়ারতেরও নিয়ম নেই। তবে একাকি কেউ কবর যিয়ারত করতে গেলে যেতে পারে এবং তা শুধু এ রাতের জন্য খাস নয়, যখন খুশী তখনই যেতে পারে। আর রাত জেগে যাতে ফজরের নামায কাজা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং রাতে ইবাদত-বন্দেগী করতে করতে ঘুমের জরুরত অনুভূত হলে, তাও পূরণ করা বাঞ্ছনীয়। আল্লামা লাখনৌবী রাহ. ‘আল আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মওজুআ’ (পৃ. ৮০-৮৫)তে পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতে রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং যেকোনো নফল আমল যাতে আগ্রহ বোধ হয় তা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ রাতে মানুষ যত রাকাআত ইচ্ছা নামায পড়তে পারে, তবে এ ধারণা ভুল যে, এ রাতের বিশেষ নামায রয়েছে এবং তার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যেসব বর্ণনায় এ ধরনের কথা পাওয়া যায় সেগুলো ‘মওযু।’ তবে এ রাত একটি ফযীলতপূর্ণ রজনী এবং এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করা মুস্তাহাব-এ বিষয়টি সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। মোটকথা, এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা যেমন ভুল তদ্রূপ মনগড়া কথাবার্তায় বিশ্বাসী হওয়াও ভুল।’ এভাবে হাদীসে বর্ণিত সহীহ তরীকায় শবে বারাআতে আমল করা মুস্তাহাব। এদিকে লক্ষ্য করেই অনেক আইম্মায়ে মুহাদ্দিসীন তাদের কিতাবে শবে বারাআত নিয়ে ভিন্ন বাব কায়েম করেছেন এবং মুহাক্কিক মাশায়িখে উম্মত শবে বারাআত-এর ফজীলত ও আমলের ওপর পৃথকভাবে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাই এ রাতের বিশেষত্ব ও ফজীলতকে অস্বীকার করা হাদীস সম্পর্কে জাহালাতের শামিল। [হাওয়ালা : ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, ২য় খণ্ড, ৬৩১-৬৪১ পৃষ্ঠা/ মারাকিল ফালাহ, ২১৯ পৃষ্ঠা প্রভৃতি] আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলের তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিস্তারিত পড়ুন

বিড়ি-সিগারেট, মদ ও তামাকজাত দ্রব্য খাওয়া ও ব্যবসায়ের বিধান

Hm Sulayman

৯ মে, ২০২৫

মদ, বিড়ি, সিগারেট, ফেন্সিডিল, ইয়াবাঃ এইগুলা খাওয়া এবং বিক্রি করার বিধান কি এটি আমাদের বিস্তারিত সুন্দরভাবে জানা থাকা দরকার। এ কথা মনে রাখতে হবেঃ কুরআন এবং হাদিসে যে বস্তু নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ এসেছে সেটা অকাট্যভাবে হারাম, আর যে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা আসে নাই; তবে ইঙ্গিত পাওয়া যায় সেটা নাজায়েজ। কিছু মূলনীতিকে সামনে রেখে এবং কিছু ইঙ্গিতমুলক আয়াত হাদিসকে সামনে রেখেই মূলত নাজায়েজ বা মাকরুহে তাহরীমি সাব্যস্ত হয়। আরো একটু খুলে বললেঃ কোন কোন হাদিসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও সনদের দূর্বলতা অথবা হাদিসের মুল মাক্বসাদ, বর্ণনাভঙ্গি দ্বারা নাজায়েজ নির্ণীত হয়। এখানে আরো লম্বা শাস্ত্রীয় আলাপ আছে, যা আহলে ঈলমগন ভালো বুঝবেন। অর্থাৎ অকাট্য হারামের চাইতে এক স্তর নিচে। তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই কবিরা গুনাহ হবে। হারাম তথা যেটি অকাট্যভাবে হারাম এবং নাজায়েজ এর মধ্যে পার্থক্য হলঃ অকাট্যভাবে প্রমাণিত হারাম বিষয়কে অস্বীকার করলে ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়, আর নাজায়েজকে অস্বীকার করলে কাফের হয় না। এবার এ কথা বুঝে নিনঃ উপরে যে সমস্ত বস্তুর কথা বলা হয়েছেঃ এর মধ্যে শুধুমাত্র মদ হারাম এবং নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিসে অসংখ্য বিধি নিষেধ আরোপ হয়েছে। বিধায় মদ পান করা, মদ বিক্রি করা, মদ সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজ করা এবং এর বিনিময় গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। কোন প্রকার বৈধতার সুযোগ নাই। পক্ষান্তরে ইয়াবা, ফেনসিডিল, আফিম, সিগারেট এগুলোর ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিসে সুস্পষ্ট অকাট্যভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। কারণঃ সিগারেট, ফেন্সিডিল, ইয়াবাঃ এগুলা সবই উৎপত্তি হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের অনেক পরে। তাই এগুলা কুরআন হাদিসে নিষেধ করার কোন সম্ভাবনা নাই। তবে যেহেতু মদের কিছু কিছু খারাবি এখানে পাওয়া যায়, তাই এগুলোকে সরাসরি হারাম না বলে নাজায়েজ বলা হয়। অর্থাৎ, এগুলোর খারাবি এবং ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় মদের চাইতে খুব একটা কম নয়। যার কারনে ফুক্বাহায়ে কিরাম শরীয়তের মূলনীতি অনুযায়ী এই বিষয়গুলো খাওয়াকে নাজায়েজ বলেছেন। অর্থাৎ অবশ্যই কবীরা গোনাহ হবে। তবে অকাট্যভাবে হারাম বলেননি, কেননা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। তাই এগুলা নাজায়েজ। বাকি কথা রইল যে এই সমস্ত বস্তুগুলো বিক্রি করা যাবে কিনা এবং এগুলোর সেক্টরে কাজ করা যাবে কিনা এবং কেউ কাজ করলে তার বিধান কি হবে। দেখুন! ইসলামি শরীয়াহর একটি মুলনীতি হলোঃ যেই বস্তু মুলগতভাবে হারাম নয়, সত্তাগত হিসেবে হালাল, এবং পাক, এবং তা দ্বারা বৈধভাবে উপকৃত হওয়া সম্ভবঃ এমন জিনিস বিক্রি করা জায়েজ। এমন জিনিস যেখানে বিক্রি করবে, সেখানে কাজের বিনিময়ে টাকা নেয়াও জায়েজ। তবে সেই বস্তু যদি কেউ অনৈতিক অবৈধ পন্থায় ব্যবহার করে, তাহলে তার সেই অবৈধ পন্থায় ব্যবহার নাজায়েজ। অর্থাৎ শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, যে সকল বস্তুর স্বাভাবিক ব্যবহার বৈধ, তথা যেসমস্ত বস্তুকে হালালভাবে ব্যবহার করা যায়, করার উপায় আছে, সেগুলোর ব্যবসা করাও বৈধ। আর যে সকল বস্তুর ব্যবহারই নিষিদ্ধ, সেগুলোর ব্যবসা করা হারাম, এবং সেখান থেকে অর্জিত আয়ও হারাম হয়। না জেনে উপার্জন করে ফেললে পরবর্তীতে সেই পরিমান টাকা তাকে সদক্বাহ করতে হবে। এবার আসুনঃ মদকে আল্লাহ তাআলা সত্তাগতভাবেই হারাম এবং নাপাক সাব্যস্ত করেছেন। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিসের মধ্যে মতকে সুস্পষ্টভাবে হারাম বলে ব্যক্ত করেছেন। বিধায় মদ বিক্রি করা মদের কারখানায় চাকরি করা মত বিক্রি করে উপার্জন করা সম্পন্ন হারাম অকাট্য হারাম। কারণ মদের অনেক ক্ষতি রয়েছে। মদের কারণে এমন মাতলামি সৃষ্টি হয় যে; মানুষ তার স্বাভাবিক জ্ঞানে থাকে না, সম্পূর্ণ উদ্ভ্রান্ত হয়ে যায়, অশ্লীলতা বেড়ে যায়। সমস্ত খারাবির কারণে এটিকে স্পষ্ট নিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সিগারেট এর তামাক, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাজাঃ এগুলোর দ্বারা সত্তাগতভাবে তথা এই বস্তুগুলো দিয়ে উপকৃত হওয়া সম্ভব। এবং এইগুলা অনেক ঔষধের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু এইগুলা দ্বারা বৈধভাবে উপকৃত হওয়ার একটি মাধ্যম রয়েছে, যদিও মানুষ অবৈধ ব্যাবহার তথা নেশা করেঃ সুতরাং বৈধ ব্যবহারের দিক থাকার কারণে এই দিকে লক্ষ্য করে এগুলার ব্যবসা করা হারামের চাইতে এক স্তর নিচে নাজায়েজ হবে। এসব ব্যবসা করার সুযোগ নাই। যদি কেউ না জেনে ভুলে করে ফেলে, তাহলে তার উপার্জিত টাকা সে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু সামনে থেকে এমন কাজে জড়িত হবে না। কারণ এটি জগতের সবচাইতে নিকৃষ্ট উপার্জনের অন্যতম। এমন ব্যক্তিদের রাসুলের শাফায়াত ভাগ্যে জোটা কঠিন। এবং যদি বিক্রেতা জানেন যে ক্রেতা এটি নেশার জন্য ব্যবহার করবে, তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে আফিম /গাজা/ফেন্সিডিল বিক্রি করবে না । অন্য যে নেশাজাত দ্রব্যের ব্যবসা করা হয়, সেগুলো যদি শুধুমাত্র নেশার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে সে ব্যবসাও বৈধ হবে না। কিন্তু যদি সেগুলো ওষুধেও ব্যবহৃত হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে আফিমের মতো একই বিধান প্রযোজ্য হবে। অনেকে বলতে চানঃ হুজুর! এগুলা তো মদের মত, নেশা হয়। যুক্তি দেখিয়ে বলেন যেঃ এগুলা বেশি খেলে নেশা হয়। দেখুনঃ নেশা বা মাতলামি দ্বারা কি উদ্দেশ্য সেটা বুঝতে হবে! মাতলামি মানে হলো ব্যক্তি তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে, সে জাগ্রত থাকার পরেও নিজের কোন প্রকার কন্ট্রোল তার মধ্যে থাকবে না, সম্পূর্ণ উন্মাদের ন্যায় হয়ে যাবে। আফিম, গাজা/ইয়াবা বেশি খেলে মাথা ঘোরায়, কিন্তু মাতাল হয় না। শুধু মাথা ঘুরানোর কারণে এটা মদের মতো হয়ে যাবে না। অনেকেরই প্রশ্নঃ তাহলে হুজুর! হাদিসে যে বলা হয়েছে‍ঃ كل مسكر حرام অর্থাৎ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম। সেক্ষেত্রে সিগারেট, ফেন্সিডিল এগুলোও তো নেশাজাতীয় বস্তু, তাহলে এগুলা অকাট্য হারাম নয় কে বলেছে? কেন হারাম নয়! দেখুন! সিগারেট বা ফেন্সিডিল বা গাজা এগুলা কি নেশা সৃষ্টিকারী? মানুষ যখন কোনো উত্তেজকের আবেশে নিজের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন তাকে নেশাগ্রস্ত বলা হয়। শুধু মাথা ঘুরালেই মাতাল বলা হয় না। যেমন কোন ব্যক্তি যদি অনেক বেশি পরিমানে মধু খায়, চিনি খায়; নিশ্চিত তার মাথা ঘুরাবে। নিজেকে অনেক সময় কন্ট্রোল করতে পারে না। তাহলে এটাকে কি আপনি মাতলামি বলবেন? নিশ্চয়ই না। তাহলে বোঝা গেলো মূল মাতলামি হয় এমন বস্তু থেকে, যেটা ব্যক্তির সম্পূর্ণ অনুভূতি বিলোপ করতে সক্ষম। আর এটা শুধু মদের মধ্যেই পাওয়া যায়। তাই অকাট্য হারাম নয় এগুলা, তবে নাজায়েজ অবৈধ অবশ্যই। কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বিষয়গুলি আমাদের বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন। পানের সাথে প্রায় অধিকাংশ মানুষই জর্দা এবং তামাক খান। আর জর্দা সম্পর্কে প্রচলিত আছে এটি নেশা জাতীয় দ্রব্য যা খাওয়া হারাম। আবার কেউ বলে মাকরূহ, কেউ বলে মুবাহ। অনেক এলাকায় মনে করা হয় যে ইমাম পানের সাথে জর্দা খায় তার পিছনে ইকতিদা করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন। ফকিহগণের মতে, জর্দা -তামাক খাওয়া হারাম নয় এবং জর্দা খায় এমন ইমামের পিছনে ইকতিদা করাও বৈধ। হাদিসে যে বলা হয়েছেঃ فَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। এটার দ্বারা মাতলামি তথা নিয়ন্ত্রনহীনতা উদ্দেশ্য । কারণ তামাক-জর্দা খেলে মানুষ মাতাল হয় একথাটি সর্বৈব মিথ্যা। এতটুকু বলা যেতে পারে যে, অতিরিক্ত খেলে মাথা ঘুরাবে। বমি আসবে। যদি বেশি খাওয়ায় মাথা ঘুরানো, বমি আসা, বা মাতাল হওয়াকে নিষিদ্ধ ও হারাম হবার মানদণ্ড ধরা হয়, তাহলে বলতে হবে মধু খাওয়া হারাম। কারণ, খাটি মধু আপনি একসাথে এক দেড় কেজি খেয়ে দেখেন মাথা ঘুরবেই। বমি আসবেই। মাতাল হয়ে যাবেন। যতক্ষণ না তা মাদক হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তথা এর মাধ্যমে মানুষ মাতাল হয়ে যাওয়া নিশ্চিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটিকে মদের হুকুমে আরোপ করা অযৌক্তিক অসাড় মস্তিস্কের মন্তব্য ছাড়া কিছুই বলার সুযোগ নেই। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ব্যাপকভাবে শির্কা এবং নাবীজ পান করতেন। যা বেশি পরিমাণ খেলে বা বেশিদিন ভিজিয়ে রাখলে তা মাদকে পরিণত হতো। সুতরাং বুঝা গেল যে, যা মূলত মাদক হিসেবে স্বীকৃত নয়, তা নেশা পরিমাণ পান না করলে তা নিষিদ্ধ নয়। عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَأَمْسِكُوا مَا بَدَا لَكُمْ، وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ النَّبِيذِ إِلَّا فِي سِقَاءٍ، فَاشْرَبُوا فِي الْأَسْقِيَةِ كُلِّهَا، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا» বুরায়দা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কবর যিয়ারত করা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম এখন তোমরা যিয়ারত কর। তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করতাম, এখন যত দিন সম্ভব সংরক্ষণ করে খেতে থাক এবং নাবীয (খেজুর ভিজানো পানি) পান করা হতে নিষেধ করতাম। (মশক ব্যতীত অন্যান্য পাত্রে) এখন সকল পাত্রে পান কর। কিন্তু নেশা হয় এমন অবস্থায় নয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৭৭। সুতরাং এব্যাপারে মুল কথা হলোঃ পানের সাথে জর্দা বা তামাক খাওয়া ডাক্তারি মতে অনেকের জন্য শারীরিক ক্ষতির কারণ। তাই যথাসম্ভব এ থেকে বিরত থাকা উচিত। আর কারো ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর প্রমাণিত হলে তার জন্য তা খাওয়া নাজায়েয হবে। গুল খাওয়া মাকরুহ, কারণ এর দ্বারা মুখে দুর্গন্ধ হয়। দলীল সমূহঃ (1) يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার মধ্যে মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে বড়।’ (সূরা বাক্বারাহ :২১৯) (2) ﻭاﻟﺨﻤﺮ ﻣﺎ ﺧﺎﻣﺮ اﻟﻌﻘﻞ ‘মাদকদ্রব্য তাই যা জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৬১৯) (3) وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ‘তোমরা পূণ্য ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘণের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।’ (সূরা মায়িদাহ : ২) (5) الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 460): "وفي الأشباه في قاعدة: الأصل الإباحة أو التوقف، ويظهر أثره فيما أشكل حاله كالحيوان المشكل أمره والنبات المجهول سمته اهـ قلت: فيفهم منه حكم النبات الذي شاع في زماننا المسمى بالتتن فتنبه. (قوله: ربما أضر بالبدن) الواقع أنه يختلف باختلاف المستعملين ط (قوله: الأصل الإباحة أو التوقف) المختار الأول عند الجمهور من الحنفية والشافعية كما صرح به المحقق ابن الهمام في تحرير الأصول (قوله: فيفهم منه حكم النبات) وهو الإباحة على المختار أو التوقف. وفيه إشارة إلى عدم تسليم إسكاره وتفتيره وإضراره، وإلا لم يصح إدخاله تحت القاعدة المذكورة ولذا أمر بالتنبه". فقط والله أعلم (6) কিফায়াতুল মুফতির মধ্যে আছেঃ ’’(سوال) میں نے ایک دکان فی الحال کھولی ہے جس میں متفرق اشیاء ہیں، ارادہ ہے کہ سگریٹ اور پینے کا تمباکو بھی رکھ لوں یہ ناجائز تو نہیں ہوگا ؟ ( جواب ۱۶۳) سگریٹ اور تمباکو کی تجارت جائز ہے او ر اس کا نفع استعمال میں لانا حلال ہے ۔محمد کفایت اللہ کان اللہ لہ‘‘۔ (ص:9 ج:148) فتاوی دارالعلوم دیوبند میں ہے: " سوال (۱۸۳) تمباکو،سگریٹ ،بیڑی فروخت جائز ہے یا ناجائز ؟ جواب :درست ہے ، لیکن مکروہ ہے۔"(ج:14، ص:364) (7) وبالجملة إن ثبت في هذا الدخان إضرار صرف خال عن المنافع فيجوز الإفتاء بتحريمه وإن لم يثبت انتفاعه ‌فالأصل ‌حله ‌مع ‌أن في الإفتاء بحله دفع الحرج عن المسلمين فإن أكثرهم مبتلون بتناوله مع أن تحليله أيسر من تحريمه وما خير رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بين أمرين إلا اختار أيسرهما.(العقود الدرية في تنقيح الفتاوى الحامدية،ج:2،ص:332) ( وَمَآاٰتٰکُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْہُ وَمَا نَھٰکُمْ عَنْہُ فَانْتَہُوْا وَاتَّقُوا اللہَ اِنَّ اللہَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ‘‘ (الحشر:۷) (9) قُلْ اِنْ کُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْکُمُ اللّٰہُ وَیَغْفِرْلَکُمْ ذُنُوْبَکُمْ وَاللّٰہُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ‘‘ (آل عمران : ۳۱ ) (10) إنَّ الحلالَ بيِّنٌ وإنَّ الحرامَ بيِّنٌ وبينهما أمورٌ مُشتبِهاتٌ لا يعلمهنَّ كثيرٌ من الناس فمنِ اتَّقى الشُّبُهاتِ استبرأ لدِينِه وعِرضِه ، ومن وقع في الشُّبهاتِ وقع في الحرامِ ، كالراعي يرعى حول الحِمى يوشكُ أن يرتعَ فيه ، ألا وإنَّ لكلِّ ملكٍ حمًى ، ألا وإنَّ حمى اللهِ محارمُه ، ألا وإنَّ في الجسدِ مُضغةً إذا صلُحتْ صلُح الجسدُ كلُّه وإذا فسدتْ فسد الجسدُ كلُّه ألا وهي القلبُ ( صحيح المسلم: ١٥٩٩)
বিস্তারিত পড়ুন

লাইলাতুল ক্কদর এর বিস্তারিত আলোচনা (২৭তম রজনী)

Hm Sulayman

১০ মে, ২০২৫

২৭তম রজনী নিয়ে কিছু কথাঃ ২৭ তম রজনী "লাইলাতুল ক্বদর" হিসেবে নিশ্চিত নয়, সুনির্দিষ্ট নয়। বরং হাদীসের ভাষ্যমতে ২১তম রজনী, ২৫তম রজনীর গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। বেজোড় রাত্রিগুলোর যে কোন রাতেই শবে ক্বদর হতে পারে। লাইলাতুল ক্বদর কোন রাত্রের জন্য নির্দিষ্ট নয়। প্রতিবছরই লাইলাতুল ক্বদর পরিবর্তন হয়। হ্যা, বেজোড় রাত্রিগুলোতে হওয়ার কথা এসেছে। তবে সেটা প্রতিবছর পরিবর্তন হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রাতে হয়। শবে ক্বদরের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরিমান রাকাতের নামাজ, নির্দিষ্ট পদ্ধতির নামাজ, নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে পড়ার নামাজ, নির্দিষ্ট সময়ে পড়ার কোন প্রকার প্রামাণিকতা নাই। এ ব্যাপারে বাজারে যত বইয়ে আলোচনা পাওয়া যায়, তার সবই মনগড়া বানোয়াট বর্ণনা। শবে ক্বদরে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বে। ২ রাকাত করে যতবেশি পারে নফল নামাজ পড়বে। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করবে। বেশি বেশি ইস্তেগফার, তাওবাহ করবে। দান সদক্বাহ করবে বাদ মাগরিব থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। শবে ক্বদরের নামাজের আলাদা কোন নিয়ত নেই। নফল নামাজ পড়তেছি যাস্ট এতটুকু নিয়ত করেই দাড়াবে। কোন নির্দিষ্ট সূরা নেই, নির্দিষ্ট সংখ্যায় পড়ার কোন প্রামাণিকতা নেই। এদিন রাতে মসজিদে মসজিদে যেসব মোনাজাত, জিলাপি, দোআর আয়োজন করা হয়; তার সব পরিত্যাজ্য। বরং একাকী ইবাদাত করবে। মসজিদে এসেও ইবাদাত করার সুযোগ আছে। তবে মিলাদ জিলাপির আয়োজন বাদে। নামাজে রুকু সিজদা দীর্ঘ করবে।
বিস্তারিত পড়ুন

অনলাইনে ফ্রি পেইড কোর্স এবং ক্র্যাকড-পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার এর বিধান

Hm Sulayman

১০ মে, ২০২৫

এখন টেলিগ্রাম এবং গুগলে প্রচুর ফ্রি আনপেইড কোর্স পাওয়া যায়, অনুরুপভাবে প্রচুর পরিমানে ক্র্যাকড বা প্রিমিয়াম সফটওয়্যার ফ্রি ফ্রি পাওয়া যায়। তদ্রুপ ফ্রি ফ্রি পিডিএফ ফাইল পাওয়া যায়। সবাই এগুলো কমবেশি ব্যাবহার করে। এগুলা ব্যবহারের কিছু ধরন আছে। (ক) কোর্সগুলো নিজে পড়ে। অন্যকে শেয়ার করে না। সফটওয়্যার নিজে ব্যবহার করে, অন্যকে দেয় না। পিডিএফ নিজে পড়ে, অন্যকে দেয় না। (খ) কোর্সগুলো নিজে পড়ে, অন্যকেও শেয়ার করে, সফটওয়্যার নিজে চালায়, অন্যকেও দেয়, পিডিএফ নিজে পড়ে, অন্যকেও দেয়, তবে এসবের কোনটা বিক্রি করে না। (গ) উপরোক্ত সব জিনিসগুলি বানিজ্যিকভাবে কেউ ব্যবহার করছে, বিক্রি করছে। বিধানগুলির উপর এবার আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ। প্রথম পয়েন্ট "ক" এর উপর কথাঃ (১) টেলিগ্রামের ফ্রি কোর্সগুলোর অনেকগুলো এমন আছে যা কোন প্রাইভেট ক্লাসের, যেগুলা বাহিরে আপলোড দেয়া টোটালি নিষেধ, শেয়ার করা, পাবলিশ করা নিষেধ, অনুরুপভাবে কিছু বইয়ের নতুন পিডিএফ থাকে, কিছু এ্যাপস আছে প্রিমিয়াম পেইড, যেগুলা প্রকাশের সাথে সাথেই পিডিএফ উন্মুক্ত করে দিলে, সাথে সেই সফটওয়্যার প্রিমিয়াম কপি পাবলিশ করে দিলে : মালিকরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং এসব প্রকাশে তাদের নিষেধাজ্ঞা থাকে সুস্পষ্ট : তাহলে এমন পিডিএফ বা এমন কোর্স বা এমন প্রিমিয়াম এ্যাপ ব্যক্তিগতভাবেও ব্যবহারের অনুমতি নাই। যদিও সে অন্য কারোর কাছে শেয়ার না করে, তথাপি নিজে নিজেও ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ নতুন নতুন কোর্স বা বইয়ের পিডিএফ বা প্রিমিয়াম এ্যাপসগুলো ফ্রি পাবলিশ করলে এর দ্বারা নিশ্চিতভাবেই মালিকদের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এবং ক্ষতি হবেও। তাই তাদের "সত্ত্বাধিকারী সংরক্ষিত" কথাটি এখানে শরয়ীভাবে খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই ব্যক্তিগতভাবেও এখানে ফ্রি ফ্রি উপকৃত হওয়ার সুযোগ নাই। ব্যাবহার করা জায়েজ হবে না। সুতরাং নতুন কোন কোর্স/এ্যাপস/পিডিএফ কিনেই নিজের কোন বন্ধু বা কোন কলিগকে শেয়ার করাটা আমানতের খেয়ানত হবে এবং কবিরা গোনাহ হবে, এবং যে নিবে তার জন্যও জায়েজ হবে না। (২) সদ্য প্রকাশিত কোন বই যদি সমসাময়িক সময়ের জন্য খুবই জরুরী হয়ে থাকে, কিন্তু তা সহজলভ্য নয়, পাওয়া যায় না, অথবা বাস্তবেই তার ক্রয়ের সামর্থ নাই অথচ সেটি খুবই জরুরীঃ তাহলে সেটির পিডিএফ পড়ার সুযোগ আছে, তবে সুযোগ থাকলে অবশ্যই মুল প্রকাশনী বা মালিক থেকে অনুমতি নেয়া উত্তম। যদিও এই মতের উপর আপত্তি করার সুযোগ আছে। কিন্তু কোর্স এবং এ্যাপসের অনুমতি নাই। কারণ বইয়ের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ঈলম সংক্রান্ত বিষয়, জ্ঞান বিতরণই উদ্দেশ্য, যা মানুষের জন্যই লেখা হয়েছে। পক্ষান্তরে পেইড কোর্স বা পেইড এ্যাপ গ্রাহকদের জন্য খাস, সেগুলো ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যটিই বেশি প্রাধান্য পায় । (৩) বই বা এ্যাপস বা কোর্সের পক্ষ থেকে যদি কোন প্রকার রেস্ট্রিকেশন না থাকে, এগুলোর ফ্রি ভার্সন বের করার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকে অথবা তাদের মৌন সম্মতি থাকেঃ তাহলে ব্যক্তিগতভাবে তা থেকে উপকৃত হওয়া, এমনকি বই প্রিন্ট করে শুধুমাত্র নিজের কাছে রেখে পড়ার জন্য জায়েজ আছে। দ্বিতীয় পয়েন্ট "খ", নিজে ব্যবহার করে, অন্যকেও শেয়ার করেঃ (১) যদি একেবারে নতুন পিডিএফ অথবা এ্যাপস অথবা কোর্স হয়; তাহলে কোনভাবেই সেটি সর্বত্র পাবলিশ, অন্যকে শেয়ার করার সুযোগ নাই। কারণ এর দ্বারা মালিকের হক্ব নষ্ট করা হয়। কোন জিনিস মেহনত করে তৈরীর একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে তা থেকে কিছু বেনিফিট বা মুনাফা অর্জন করা। এখন কেউ কোনক্রমে ফ্রি এ্যাপস/কোর্স/পিডিএফ পেয়ে যদি সেটি পাবলিক করে, তাহলে মালিকের শতভাগ ক্ষতি হবে। আর এটি একেবারেই নাজায়েজ; এই মাসআলা তখন, যখন উল্লেখিত এ্যাপস/পিডিএফ/কোর্স একদম বা মোটামোটি নতুন হয়। (২) এগুলা যদি এতটা পুরাতন হয়ে যায়, যার দ্বারা এতদিনে মালিকের মুনাফা মোটামোটি অর্জব হয়ে গিয়েছে বা এতবেশি পাবলিক হয়ে যায়, যেটা একেবারেই সবার জন্যই সহজলভ্য, সবখানে পাওয়া যাচ্ছে; তাহলে তা অন্যকে শেয়ার করার সুযোগ আছে। এতে গোনাহ হবে না। মোটকথা যেসব বইয়ের স্বত্ব সংরক্ষণের ঘোষণা দেওয়া হয়নি অথবা তার স্বত্বাধিকারী পিডিএফ প্রচার করা হচ্ছে জেনেও অসন্তোষ প্রকাশ করেনি অথবা প্রতিবাদ করেনি, এমন বই দ্বারা নিজে উপকৃত হওয়া এবং অন্যকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। তৃতীয় পয়েন্ট "গ", ব্যবসা করাঃ উল্লেখিত জিনিসগুলো একেবারে নতুন বা মোটামোটি নতুন বা যথেষ্ঠ পুরাতন যেটাই হোক; যদি মালিকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকে যে এগুলোর দ্বারা কোন প্রকার ব্যবসা, প্রিন্ট করে বিক্রি করা, বাজারজাত করা নিষেধ থাকে; তাহলে এগুলোকে কখনোই বাণিজ্যিক বাজারজাত করার কোন প্রকার সুযোগ নাই। হ্যাঁ, নিজের জন্য প্রিন্ট করে নিয়ে রাখতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়া দেয়ার জন্য প্রিন্ট করতে পারবে। তবে এগুলোর কোনটিই বিক্রি করার সুযোগ নেই। যেসব পিডিএফ বই/কোর্স/এ্যাপস অনলাইনে পাওয়া যায় এবং তাতে স্বত্ব সংরক্ষণের ঘোষণা থাকে, কিন্তু এ কথা জানা যায় যে এটা স্বত্বাধিকারীর অনুমতিতে পিডিএফ করা হয়েছে, নাকি অনুমতি ছাড়াই পিডিএফ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের প্রবল ধারণা অনুযায়ী আমল করবে। যদি ব্যক্তির প্রবল ধারণা হয় স্বত্বাধিকারী এতে সন্তুষ্ট নয়, তবে তাকওয়ার দাবি হলো এগুলো পরিহার করা। এর পরও কেউ যদি তা দ্বারা উপকৃত হয়, তবে তার জন্য তা নাজায়েজ হবে না। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে প্রকাশকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর এর দায় বর্তাবে, পাঠকের ওপর নয়। তবে একেবারে নতুন হলে তো অবশ্যই এসব থেকে বিরত থাকবে। উল্লেখ্য যেঃ আমাদের ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে যে উইন্ডোজ ব্যবহার করি বা মাইক্রোসফট অফিস, ভিপিএন, এন্টি ভাইরাসসহ মিডিয়ার কাজের জন্য অনেক পেইড সফটওয়্যারের ক্র্যাকড ভার্সন বিনামূল্যে ব্যবহার করি, মুলত এই সফটওয়্যারগুলোর মালিক হারবি কা*ফে*র'রা। হারবি কা'ফে-র"দের সকল সম্পদ মুসলিমদের জন্য হালাল, যতক্ষণ না তারা আমাদের সঙ্গে কোনো চুক্তির আওতায় আসে এবং তাদের সম্পদ সংগ্রহে তাদের সঙ্গে কৃত কোনো চুক্তি বা ওয়াদা ভঙ্গ করা না হয়। সুতরাং তাদের তৈরি এসব সফটওয়্যারের ক্র্যাকড ও পাইরেটেড ভার্সন (নেট থেকে হোক বা দোকান থেকে কিনে হোক) ব্যবহার করতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই। বাজারজাত করাও জায়েজ আছে।
বিস্তারিত পড়ুন

তারাবীহ নামাযে প্রতি ৪ রাকাত পর পর দোআ

Hm Sulayman

৯ মে, ২০২৫

আমাদের দেশে তারাবীহ নামাজের প্রতি চার রাকাত পর পর জোরে জোরে একটি দোআ পড়া হয়। "সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি....! এটিকে তারাবীহ নামাজের দোআ বলা হয়ে থাকে। ইমাম সাহেব না পড়লে তার উপর রাগ করা হয়। এটিকে মাসনুন দোআর মতই সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়া হয়। বাস্তব কথা হলো: উক্ত দোআটি হাদিসে পাওয়া যায় না। হাদিসের কোন প্রমাণিত দোআ নয় এটি। বরং ফুক্বাহায়ে কেরাম বিভিন্ন হাদিসের টুকরা টুকরা কিছু শব্দ/তাসবীহকে একত্রিত করে একটি দোআর রুপ দিয়েছেন। এটি অর্থবোধক এবং সুন্দর। এবং এটি পড়ার ও অবকাশ আছে। তবে এটিকে মাসনুন কোন হাদীসের দোআ মনে করা যাবে না, এবং আবশ্যপাঠ্য মনে করা যাবে না। বরং প্রতি চার রাকাত পরপর বিভিন্ন মাসনুন দোআ এবং দুরুদ শরীফ পাঠ করা উচিত। ফতোয়ায়ে শামিঃ "(يَجْلِسُ) نَدْبًا (بَيْنَ كُلِّ أَرْبَعَةٍ بِقَدْرِهَا وَكَذَا بَيْنَ الْخَامِسَةِ وَالْوِتْرِ) وَيُخَيَّرُونَ بَيْنَ تَسْبِيحٍ وَقِرَاءَةٍ وَسُكُوتٍ وَصَلَاةٍ فُرَادَى، نَعَمْ تُكْرَهُ صَلَاةُ رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ". "(قَوْلُهُ: بَيْنَ تَسْبِيحٍ) قَالَ الْقُهُسْتَانِيُّ: فَيُقَالُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: «سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ نَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، نَسْأَلُك الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِك مِنْ النَّارِ»، كَمَا فِي مَنْهَجِ الْعِبَادِ. اهـ". (شامي، كتاب الصلاة، باب الوتر و النوافل، مبحث صلاة التراويح، ٢/ ٤٦)
বিস্তারিত পড়ুন

তারাবীহ এর পর প্রচলিত মুনাজাত

Hm Sulayman

২৯ এপ্রিল, ২০২৫

তারাবীহর নামাজ শেষ করার পর ইমাম সাহেবদেরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচলিত একটি দোআ পাঠ করতে দেখা যায়। "আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার.... "। কোন কোন জায়গায় উক্ত দোআটি না পাঠ করলে মুসাল্লিরা রাগারাগিও করে। আমি নিজেই এর সাক্ষী, আমার সঙ্গেই ঘটেছে কয়েকবার। আসল কথা হলো: উক্ত দোআটি সরাসরি হাদিসের কোন হুবহু বর্ণিত দোআ নয়। বরং হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন দোআ মূলক বাক্য এবং বেশকিছু সুন্দর অর্থবোধক বাক্যকে জুড়ে দিয়ে সুন্দর দোআর একটি রুপ দেয়া হয়েছে মাত্র। মৌলিকভাবে দোআটি পাঠ করতে কোন দোষ নেই। এটি পাঠযোগ্য। তবে এটি তারাবীহর নামাজের নিদৃষ্ট কোন দোআ নয়, এবং পুরোবছরে শুধুমাত্র রমজানের তারাবীর নামাজের পরেই এটি পড়ার নিয়ম বা জরুরত মনে করা যাবে না এবং এরুপ প্রচলন করা যাবে না। বছরের যে কোন সময় যে কোন নামাজের পর দোআটি পাঠ করা যাবে। উপরন্তু দোআটি পাঠ করা সুন্নাত বা জরুরী মনে করা যাবে না, এরকম আবশ্যকীয় মনে করলে বিদআত হবে। তাই বিষয়টি মুসাল্লিদের আগে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়া উচিত। মাঝেমাঝে পাঠ করা, ছেড়ে দেয়া, সঙ্গে আরো বিভিন্ন দোআ যুক্ত করে মোনাজাত করলে সমস্যাটা আর থাকে না। রেফারেন্সঃ الأذكار للنووی "اعلم أن صلاة التراويح سنة باتفاق العلماء، وهي عشرون ركعة، يسلم من كل ركعتين، وصفة نفس الصلاة كصفة باقي الصلوات على ما تقدم بيانه، ويجئ فيها ‌جميع ‌الأذكار ‌المتقدمة كدعاء الافتتاح، وإستكمال الأذكار الباقية، واستيفاء التشهد، والدعاء بعده." (‌‌كتاب الأذكار في صلوات مخصوصة، باب أذكار صلاة التراويح، ص: 183، ط: دار الفكر للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت - لبنان) فتاوی شامی : "(‌يجلس) ‌ندبا (بين كل أربعة بقدرها وكذا بين الخامسة والوتر) ويخيرون بين تسبيح وقراءة وسكوت وصلاة فرادى، نعم تكره صلاة ركعتين بعد كل ركعتين. (قوله وكذا بين الخامسة والوتر) صرح به في الهداية واستدرك عليه في النهر بما في الخلاصة من أن أكثرهم على عدم الاستحباب وهو الصحيح. اهـ. أقول: هذا سبق نظر، فإن عبارة الخلاصة هكذا: والاستراحة على خمس تسليمات اختلف المشايخ فيه وأكثرهم على أنه لا يستحب وهو الصحيح اهـ فإن مراده بخمس تسليمات خمس أشفاع: أي على الركعة العاشرة كما فسر به في شرح المنية لا خمس ترويحات كل ترويحة أربع ركعات، فقد اشتبه على صاحب النهر التسليمة بالترويحة فافهم. (قوله بين تسبيح) قال القهستاني: فيقال ثلاث مرات «سبحان ذي الملك والملكوت، سبحان ذي العزة والعظمة والقدرة والكبرياء والجبروت، سبحان الملك الحي الذي لا يموت، سبوح قدوس رب الملائكة والروح، لا إله إلا الله نستغفر الله، نسألك الجنة ونعوذ بك من النار» كما في منهج العباد. اهـ." (‌‌كتاب الصلاة، ‌‌باب الوتر والنوافل، ج: 2، ص: 46، ط: سعيد)
বিস্তারিত পড়ুন

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহর সাদৃশ্য সিল দিয়ে তৈরি আংটির বিধান

Hm Sulayman

২৮ এপ্রিল, ২০২৫

আবেগ বিক্রি করে খেতে আমরা পটু। যে কোন জিনিসের ইসলামি রুপায়ন হলেই সেটার প্রতি ঝুঁকে পড়ি আমরা। ছবির এই আংটি অনেকে অনলাইনে বিক্রি করছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহর সাদৃশ্য সিল দিয়ে বিক্রি হচ্ছে আংটি। অনেক আলেমও বিক্রি করছেন অনলাইনে। বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি আংটিটি স্টিল দ্বারা তৈরী। কয়েকটি বিষয় এখানে দ্রষ্টব্যঃ যদি স্টিলের তৈরী হয়, তাহলে তো নারী পুরুষ কারোর জন্যই কোনভাবে পরিধান করার কোন সুযোগ নেই। যদি রুপার তৈরী হয়, তাহলে দেখতে হবে এর ওজন কত। সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম ৩৭৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পুরুষের জন্য রুপার আংটি পরিধান বৈধ। এখন এটি সেই ওজন কিনা, যাচাই করা জরুরী। টয়লেটে আল্লাহ-নবীর নাম সম্বলিত কোন আংটি উন্মুক্ত নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নাই। ঢেকে যেতে হবে। নোটঃ পুরুষের জন্য শুধুমাত্র রুপার আংটি পরিধান জায়েজ। মহিলাদের জন্য শুধুমাত্র স্বর্ণ-রুপা এবং বর্তমানে সিটিগোল্ড/ইমিটিশন, হীরা, পাথর, কাচ, প্লাস্টিকের আংটি ব্যাবহার জায়েজ। এই ছাড়া বাকি যত ধাতুর আংটি হতে পারেঃ পিতল, লোহা, কাসা, তামা, সীসা, দস্তা, পারদ, এ্যালুমিনিয়াম, সিলভার সমস্ত প্রকার আংটি সরাসরি পরিধান তথা স্বর্ণ রুপার প্রলেপ দেয়া ছাড়া পরিধান নাজায়েজ। তবে আংটি ছাড়া মহিলারা অন্যান্য অলংকারের ক্ষেত্রে সমস্ত ধাতুর অলংকার ব্যাবহার করতে পারবে। অতএব শুধুমাত্র সিল/স্টিকার দেখেই লাফিয়ে পড়া যাবে না। যাচাই বাছাই করা জরুরী। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পুরুষদের আংটি যদি ৪ গ্রাম রুপার সাথে অন্য ধাতু এবং পাথর ব্যবহার করার ফলে ওজন ৪.৩৭৪ গ্রামের বেশি হয় তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ।
বিস্তারিত পড়ুন

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের বিধান

Hm Sulayman

২৭ এপ্রিল, ২০২৫

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস ও তা ব্যবহার এর বিধানঃ যদি কোনো ব্যক্তি রাস্তায় টাকা বা কোনো মূল্যবান জিনিস পড়ে থাকতে দেখেন, আর যদি তিনি মালিককেও চেনেন এবং তার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, এবং রেখে দিলে জিনিসটির নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা তুলে মালিকের কাছে পৌঁছে দিবেন । আর যদি এই আশা থাকে যে মালিক নিজেই এসে খুঁজে নেবেন, সেই সুযোগ থাকে, তাহলে তা না তুললেও চলবে। তবে যদি মালিককে না চেনেন, এবং রেখে দিলে জিনিসটির নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা তুলে নিবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তা "লুকতা" তথা গুম হওয়া জিনিস হিসেবে গণ্য হবে। আর লুকতার বিধান হলো, তা মালিকের কাছে পৌঁছানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা, জনসমাগমের জায়গায় বা সম্ভাব্য স্থানগুলিতে ঘোষণা দেওয়া। যদি মালিককে না পাওয়া যায় এবং এই ধারণা হয় যে মালিক তা নিতে আর আসবেন না এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন, যদি তিনি গরিব তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন, তবে তিনি তা নিজেই ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি তিনি গরিব না হন, তাহলে নিজে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। বরং কোন মিসকিন বা ফকিরকে দিয়ে দিতে হবে। নিজে ঋণ হিসেবে নিয়ে পরবর্তীতে সদকা করে দেয়ার নিয়তে রেখে দেয়ার সুযোগ নাই। উল্লেখ্য যেঃ ঐ পথে পাওয়া বস্তু সদকা করার পর বা নিজে গরিব হওয়ার কারণে তা ব্যবহার করার পরে মালিক এলে এবং তার জিনিস বা টাকার দাবি করেন, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি আখেরাতে সাওয়াবের অধিকারী হবেন। অবশ্য যদি কেউ কোনো গুম হওয়া জিনিস নিরাপত্তার জন্য তুলে নেয় এবং তা রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, তারপরেও যদি তা চুরি হয়ে যায়, তবে এটি তার ত্রুটি বলে গন্য হবে না এবং ধরে নেয়া হবে যে এই লুকতা তার কাছে আমানত ছিল; সুতরাং তার ওপর ক্ষতিপূরণের দায় থাকবে না। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। অনুরুপভাবে যদি কেউ হারিয়ে হওয়া জিনিস নিরাপত্তার জন্য তুলে নেয় এবং পরে সেই ব্যক্তি মারা যান, তবে তার ওয়ারিশদের (উত্তরাধিকারীদের) দায়িত্ব হবে সেই পাওয়া জিনিসটি সংরক্ষণ করা বা ঘোষণা দিয়ে মালিক বা তার উত্তরাধিকারী খুঁজে বের করা। যদি সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তা সদকা করা বাধ্যতামূলক। যদি ওয়ারিশরা গরিব হন, তাহলে তারা তা ব্যবহার করতে পারবে, নতুবা পারবে না।
বিস্তারিত পড়ুন

প্রচলিত ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, অলিম্পিক খেলাধুলার হুকুম এবং তা থেকে উপার্জনের বিধান

Hm Sulayman

২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ভূমিকাঃ সাধারণভাবে শরীয়ত ফুটবল ক্রিকেট বা অন্য খেলাগুলাকে ঢালাওভাবে নিষিদ্ধ করেনি। বরং যদি শরীয়তের নিয়ম-কানুন রক্ষা করা হয় তাহলে এই খেলা জায়েজ হবে তো বটেই ক্ষেত্র বিশেষ সওয়াবের কাজ হবে। যদি আপনার এই খেলা শারিরিক ব্যায়াম তথা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য হয়ে থাকে অথবা ধর্মীয় এবং পার্থিব কোন উপকারিতা লাভের জন্য হয়ে থাকে অথবা কমপক্ষে মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি দুর করার জন্য খেলা হয়ে থাকে তাহলে এই খেলা জায়েজ হবে নিঃসন্দেহে। বরং দ্বীনি স্বার্থে শরীর চাঙ্গা করার জন্য খেললে সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ! তার জন্য শর্তঃ (১) উক্ত খেলাধুলার মধ্যে কোনপ্রকার গোনাহ অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। যেমন সেটা সুদ/ঘুষ/জুয়ার ভিত্তিতে হতে পারবে না, খেলাধুলায় কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যেমনটা জয়ী হলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অঘটন ঘটিয়ে দেয়! মারারামারি বিভিন্ন ফেৎনার অনুপ্রবেশ বন্ধ হতে হবে। (২) খেলায় জড়িত থাকার কারণে শরীয়তের যে কোন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কোন হুকুমের পরিপন্থী হতে পারবে না। তার কারণে দ্বীনের জরুরী বিষয় বাধাগ্রস্ত হতে পারবে না। বিশেষ করে নামাজ রোজা ইত্যাদি বিষয়গুলো যার উপর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত, যা দ্বীনের শ্রেষ্ঠ স্তম্ভ তা বাধাগ্রস্থ হতে পারবে না। খেলার সুবাদে নামাজ কাযা, রোজা ভঙ্গ করলে তা খেলা কখনোই বৈধ হবে না। গানবাদ্য নর্তকীর নৃত্য অশ্লীলতার অনুপ্রবেশ হতে পারবে না। বিশেষ করে নিজের চোখের হেফাজত করতে হবে। কোনপ্রকার বেপর্দা হওয়া যাবে না। সতর বের করা যাবে না। ফুটবল খেলায় হাটুর উপরে কাপড় বের করে খেলা হয় যা সুস্পষ্ট হারাম হবে। (৩) খেলাধুলায় জড়িত থাকার কারণে যদি দ্বীন থেকে দুরে সরে যায়, মসজিদ বাদ দিয়ে স্টেডিয়ামুখী হয় তাহলে ঐ খেলার উপর আল্লাহর গজব!! খেলায় জড়িত থাকার কারণে দ্বীনি এবং দুনিয়াবি জরুরী কাজগুলো ব্যাহত হতে পারবে না। যেমন খেলাধুলার কারণে পরিবারের অধিকারগুলো আদায় না করলে খেলাটা অন্যায় হবে অবৈধ হবে! উপরোক্ত শর্তগুলো যদি পরিপূর্ণরুপে পাওয়া যায় তবেই খেলা বৈধ!! যেমন বিভিন্ন মাদরাসায় আসরের পরে ক্রিকেট/ফুটবল খেলে, গ্রামে খেলে। উল্লেখিত শর্ত পূরণ হলে খেলা জায়েজ। মৌলিক কথায় ফিরে আসিঃ বলুন তোঃ ক্রিকেট ফুটবল বা প্রচলিত কোন খেলার মধ্যে উক্ত শর্তগুলির প্রতি লক্ষ করে খেলাধুলা করা হয়? কোন খেলা ইসলামি মুলনীতি অনুযায়ী খেলা হয়? কোন খেলা শরীয়তের দলীলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? অন্তত ১৫/১৬ টি কারণ রয়েছে যার কারণে খেলার বৈধতার দিক থাকলেও উক্ত ১৫/১৬ টি কারণে তা হারাম হয়ে যাচ্ছে! কারণগুলো লক্ষ করুনঃ (১) অধিকাংশ খেলাধুলা জুয়ার উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। জুয়া ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল খেলার কল্পনা করা দুষ্কর! বড় বড় টুর্ণামেন্ট বা ঘরোয়া লীগ বা যাইই বলেন : সকল দলের এন্ট্রি ফি দিতে হয় : আর কাপ জিতলে একটি দল পাবে!! এন্ট্রি ফির টাকা সবাই জমা দেয়, এটি আবার টুর্ণামেন্টের বিভিন্ন কাজে খরচ হয়, যেমন : প্রাইজমানিসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে। সবাই টাকা দিয়ে শরিক হচ্ছে, কিন্তু পুরস্কার পাচ্ছে একটি দল! এটাকে শরীয়তে জুয়া বলে। ইসলামী শরীয়তে যে সমস্ত বিষয় কঠোরভাবে নিষেধ তার অন্যতম একটি বিষয় হলো জুয়া! আল্লাহ কুরআনে বলেনঃ انما الخمر والميسر.....رجس من عمل الشيطا فاجتنبوه. অনুবাদঃ নিশ্চয়ই জুয়া হলো শয়তানের নাপাক নিকৃষ্ট কাজের অন্তর্ভুক্ত। অবশ্যই তোমরা তা পরিহার করো। (২) একজন মুমিনের জীবনে ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো নামাজ। খেলাধুলার কারণে চুক্তিবদ্ধ হতে হয় যে খেলা চলাকালীন নামাজ পড়া যাবে না, অথবা পড়ার অনুমতি থাকে না। ডে নাইট ম্যাচগুলো শতভাগ নামাজ পড়া হয় না। টেস্ট বা টি টুয়েন্টি অথবা ফুটবল যাই বলুন নামাজ পড়া হয় না ইচ্ছাকৃত! একটি অনর্থক কাজ খেলাধুলার জন্য নামাজ মিস হয়ে যাচ্ছে! আমরা তো এটাও দেখেছি খেলার উদ্বোধনের জন্য ঢাকার মসজিদের আযান বন্ধ রাখা হয়েছিল! আল্লাহ কুরআনে বলেনঃ ان الصلاۃ كانت علي المومنين كتابا موقوتا . অনুবাদঃ নিশ্চয়ই মুমিনের জন্য তার নামাজকে যথাযথ সময়ে আদায় করা ফরজ করা হয়েছে। لا طاعۃ لمخلوق في معصيۃ خالق . পাপ কাজে মাখলুকের আনুগত্য করা যাবে না। তাই খেলার কারণে ম্যানেজমেন্টের কথা মেনে নামাজ বাদ দেয়া বৈধ নয়! (৩) ইসলামের তৃতীয় শ্রেষ্ট রুকন বা স্তম্ভ হলো রোযা রাখা। শতভাগের ৮০% ক্রিকেটার রোজা রাখে না খেলাধুলার কারণে! يا ايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام অনুবাদঃ হে ঈমানদারগন! তোমাদের উপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত রোজা ফরজ করা হয়েছে। (৪) প্রাপ্ত অর্থের অধিকাংশশ টাকা সুদ/ঘুষ/মদ বিক্রি অবৈধ পন্থার অনুদান থেকে! الذين ياكلون الربي لا يقومون الا كما يقوموا الذی يتخبته الشيطان من المس. যারা সুদ খায় তারা কেয়ামতে এমনভাবে দাড়াবে যেন শয়তান তাকে স্পর্শ করার দ্বারা বিকলাঙ্গ করে দিয়েছে! (৫) সমস্ত ইবাদাতে অমনোযোগিতা সৃষ্টি হয়! অবসাদ পেয়ে বসে। অবসরে আল্লাহর কথা স্বরণ হয় না। ধ্যান ধারণা হয় খেলাধুলা নিয়ে। দ্বীন বিমুখ হয়ে খেলার প্রতি ঝোক বেড়ে যায়। দ্বীন থেকে দুরে সরে যায়। আখেরাত বিমুখ হয়ে যায়। اذكر اﷲ ذكرا كثيرا অনুবাদঃ সদা আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করো! (৬) খেলাধুলা মুসলিমের আবিষ্কার নয়। বরং খৃষ্টীয় কালচার। শরীর চর্চার জন্য উল্লেখিত শর্তাবলী মেনে খেললেই যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু সেসব বাদ দিয়ে আজ খেলাকে পেশা আর সংস্কৃতি হিসেবে গ্রহণ করেছি আমরা। ইহুদি খৃষ্টানের কালচার আমরা প্রচার প্রসার করছি। خالفوا اليود والنصاري . তোমরা ইহুদি নাসারাদের বিরোধীতা করো, তাদের অনুসরণ কখনোই নয়। (৭) জিন্দেগীর সবচেয়ে মুল্যবান সময় অনর্থক কাজে ব্যয় হয়। যার মধ্যে দ্বীন দুনিয়ার ফায়দা নেই। কোন আমল ঈমান শিখতে পারে না। তার গোটা জীবন খেলাধুলা নিয়ে গবেষণায় কেটে যায়। সর্বদাই খেলাধুলার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে! الذين ضل سعيهم في الحياۃ الدنيا وهم يحسبون انهم يحسنون صنعا . তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ: যারা দুনিয়ায় অনর্থক কাজে সময় ব্যায় করতেছে অথচ তারা সবাই ভাবতেছে যে তারা ভালো কাজ করতেছে! (৮) শতভাগ পর্দা লঙ্ঘন হয়। বেপর্দা অশ্লীলতা বেহায়া নর্তকীর নৃত্য ড্যান্স, ওপেন সেক্সুয়াল সিন এগুলা অহরহ!! অর্ধনগ্ন যুবতী নারীর ইন্টারভিউ দিতে হয়! উপস্থাপিকা! سۃر الرجل ما بين السرۃ الي الركبۃ . يا علي ! لا تتبع نظرتك فان لك الاولي . পুরুষের সতর হলো : নাভির থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত! (৯) গজবের টুর্ণামেন্ট শুরু হয় গানবাদ্য দ্বারা। যেটা শয়তানের হাতিয়ার। সঙ্গে উপস্থিত আম জনতাও নেশায় বুঁদ হয়ে যায়। তারাও গোনাহে শামিল হয়ে যায়। আতশবাজি আরো ভয়াবহ কাজ হয় যা গজবের কারণ! ومن اناس من يشتري لهو الحديث ليضل عن سبيل اﷲ بغير علم ويتخذها هزوا . ان اتغني مزمار الشياطين . কিছু মানুষ এমন আছে : যারা গানবাদ্য ক্রয় করে আমদানি করে যেন লোকদের পথভ্রষ্ট করতে পারে অজ্ঞতাবশত এটা! এবং দ্বীনকে তারা তামাশার বস্তু ধর্তব্য করে! গানবাদ্য হলো শয়তানের হাতিয়ার। عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ فِى هَذِهِ الْاُمّةِ خَسْفٌ وقَذْفٌ وَمَسْخٌ وَذَلِكَ اِذَا شَرِبُوْا الْخُمُوْرَ واتَّخَذُوْا القَيْنَاتِ وَضَرَبُوْا بِالْمَعَازِفِ. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া। عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ. বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ: রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা ( খেলাধুলা) বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী) (১০) নিজে ক্রিকেট /ফুটবল খেলার কারণে বংশ পরম্পরায় এই খেলার সূত্র চালু হয়ে যায়। ছেলে থেকে নাতি/তার নিন্ম বংশধর এভাবে ক্রমবিকাশ হতে থাকে নিজের গোনাহের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে অবিরত। من سن في الاسلا سنۃ سيءۃ فعمل بعده كتب عليه مثل وزر من عمل بها ولا ينقص من اوزارهم شيءا. যে ব্যক্তি একটি পাপ কাজের পথ দেখিয়ে যায় : সেটা দেখে যে ব্যক্তি পাপ করে তখন ঐ ব্যক্তির গোনাহ পথদেখানেওয়ালা ব্যক্তির ঘাড়ে যায়। কারোর গোনাহে কমতি হয় না। (১১) পুরো দুনিয়া লাইভ দেখে, তারাও গোনাহে লিপ্ত হয়। বেপর্দার সয়লাবে তারা হারিয়ে যায়। নেশায় মাতাল হয়ে যায়। গানবাদ্য তারা হাতে তালি দেয়!! انساكم كما نسيتم لقاء يمكم هذا. তোমরা দুনিয়াতে আমাকে ভুলেছো আমি আজ কিয়ামতে তোমাকে ভুলে যাব! (১২) সমর্থকদেরর মধ্যে খেলাধুলার সাপোর্ট নিয়ে দাঙ্গামা বাধে। গীবত করে একে অন্যের। বিভেদ মারামারির সূত্রপাত হয়। এমনকি রক্তারক্তি হবার ঘটনা কম নয়। ولا تفسدوا في الارض بعد اصلاحها . ان الله لا يحب المحسنين . যমিনের মধ্যে ফাসাদ ঝগড়া করো না, আল্লাহ ঝগড়া ফাসাদকারীদের পছন্দ করেন না। (১৩) বিধর্মীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। তাদের লাইফস্টাইল ফলো করে জনতা। তাদের মত চুল কাটে, পোষাক পরিধান করে। তাদের কারণে সাধারণ পাবলিকের আমল নষ্ট হয়। . من تشبه بقوم فهو منهم যে ব্যক্তি বিধর্মীর সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। (১৪) নামাজে মন বসে না। স্কোর দেখতে মন ছটফট করে। নামাজ শেষ করেই স্কোর দেখে প্রশান্তি লাভ করে। রাত জেগে খেলাধুলা করার কারণে, খেলাধুলা দেখার কারণে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়! নামাজ পড়া হয় না! ان الصلاۃ تنهي عن الفحشاء والمنكر নামাজের মত নামাজ হলে তা সমস্ত পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে! (১৫) ইহুদি খৃষ্টানের সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব হয়। খেলাধুলার সুবাদে বিষয়টি অতি স্বাভাবিক। لا تتخذوا اليود والنصاري اولياء ইহুদি খৃষ্টানকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করিও না । (১৬) টুর্ণামেন্ট বা লীগের সুবাদে প্রতিষ্ঠিত জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠান নড়েচড়ে বসে। দুনিয়া জুড়ে অনলাইনে জুয়ার ভয়াল থাবায় ডুবে যায়!! নিঃস্ব হয়ে যায়। পুরো শরীয়ত বিঘ্নিত হলো!! واتقوا اﷲ . সকল কাজে আল্লাহকে ভয় করো! উপরোক্ত যে কারণগুলো বলা হলো : সমস্ত কারণ পর্যবেক্ষণ করে কুরআন সুন্নাহ এবং উলামায়ে কেরামের চুড়ান্ত রায় এটাঃ উক্ত ঈমান বিধ্বংসী দ্বীন বিরোধী কারণগুলি বিবেচনা করে এমন পদ্ধতিতে খেলা সম্পুর্ণ হারাম!! কারণ খেলার দ্বারা দ্বীন ধ্বংসের পথে। ব্যক্তির জিন্দেগী বরবাদ। তাই যেই খেলার দ্বারা দ্বীন বাধাগ্রস্থ হয় শরীয়ত কখনোই তা খেলার অনুমোদন করে না। তা অকাট্য হারাম। আর যে বিষয় অকাট্য হারাম হয় তার থেকে উপার্জন করা কুরআন সুন্নাহর আলোকে এবং উম্মতের ইমামদের মতে তা সম্পুর্ণ হারাম উপার্জন বলে বিবেচিত হবে। কারণ খেলাটাকে শরীয়ত কোন "গ্রহনযোগ্য কাজ" হিসেবে ধর্তব্য করেনি! বরং অনর্থক ফালতু কাজ হিসেবে বিবেচনা করেছে। আর ফালতু অনর্থক কাজ কে নিজের উপার্জনের পেশা বানিয়ে নেয়া এবং ঐ অনর্থক কাজ করার জন্য শরীয়তকে জবাই করাটা কস্মিনকালেও ইসলামী শরীয়ত বৈধতা প্রদান করে না।
বিস্তারিত পড়ুন

বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ চতুর্থ (শেষ) পর্ব

Hm Sulayman

১৬ এপ্রিল, ২০২৫

চতুর্থ বিষয়ঃ অবশ্য কেউ কেউ বলার চেস্টা করেন যে, বিটকয়েন যদিও সরাসরি টাকা নয় কিন্তু বিটকয়েন টোকেন হিসেবে তো ব্যবহার হতে পারে। আমাদের দেশে টাকা কিন্তু দুই রকম আছে, একটা সরকারি নোট, একটা ব্যাংক নোট। আমাদের ১০০০ বা ৫০০ টাকার যেসব নোট দেখি এগুলো কিন্তু মূল টাকা না, সরকারি টাকাও না। মুল টাকাগুলোর মধ্যে বাহককে... লেখাটা থাকে না। এবং এই নোটগুলোর কিন্তু বাস্তব কোন ভ্যালু নাই, যে কারণে সরকার ইচ্ছামতন প্রতি বছর টাকা ছাপাচ্ছে আর মুদ্রাস্ফীতি বাড়াচ্ছে। এর জবাব আগেই গিয়েছে। কোন মুদ্রা যথাযথভাবে মুদ্রার হওয়ার জন্য দুটি শর্ত একেবারে জরুরি। (১) রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তার ব্যাবহারযোগ্য হওয়া। (২) জনগণ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করা। ৫০০/১০০০ টাকা বাংলাদেশের এগুলোর সরকারি স্বীকৃতি এবং ব্যাবহারযোগ্যতা তো আছেই, সঙ্গে জনগনের গ্রহণ করাটাও আছে। অর্থাৎ কোন বস্তু মুদ্রা কিংবা মূল্যমান হওয়ার জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও ভ্যালু থাকতে হবে। যেমন আমাদের দেশের একশ টাকায় ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে একশ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে’ এ বাক্য লেখার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া আছে। এখন রাষ্ট্র কর্তৃক এ স্বীকৃতি বিলুপ্ত করলে তা মূল্যমান হারিয়ে কেবল একটি কাগজের টুকরায় পরিণত হবে। কাউকে ফ্রি দিলেও নিতে চাইবে না। ‘চাহিবামাত্র...’ এ বাক্যটিই রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি। বিটকয়েন টোকেন হিসেবেও জায়েজ হবে না। এর কারণ একাধিকঃ এর প্রচলণকারী কারা জানা নাই, অজ্ঞাত। পরিচালনা কমিটি নাই। এটির কোন বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই, স্রেফ স্ক্রিন ভিউ। এটি সবার কাছে সহজলভ্য না, ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারিভাবে এগুলোর কোন প্রচারণা নেই, বৈধতাও নেই। সর্বশেষ এটি টোকেন হলেও এর প্রকাশকের অজ্ঞতা, এর ভবিষ্যৎ বিষয়ে অজ্ঞতা, এর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রকাশক না থাকা, কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্বশীল না থাকা, রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ না থাকা, ব্যাপকভাবে স্প্যাকুলেশন হওয়ায় এর মূল্য স্থির না থাকা এবং আইনবহির্ভূত কাজে অধিক ব্যবহৃত হওয়ায় এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যমানবিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) হয় না; সঙ্গে জুয়া তো আছেই। তাই উসুলে শরীআহ মতে এটি মুল্যমানই রাখবে না ধোঁকা প্রতারণার সমুহ সম্ভাবনার কারণে। কিছু কিছু ভাই বলেন - হাতে মাল না থাকার কারনে যে লেনদেন নিষিদ্ধ হয়, এই সুত্রে সফটওয়্যার, পিডিএফ বই, অনলাইন কোর্স কেনাবেচাও নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। কারন বাস্তবে এটা কবজ করা যায় না। অনুরুপভাবে এখন কিছু দেশের সরকার বিটকয়েনের লেনদেন অনুমোদন দিয়েছে। তাহলে বিটকয়েনের হুকুম সেখানে কি হবে? তাছাড়া গতকয়েক বছরে বাংলাদেশের টাকার তুলনায় বিটকয়েনের রেট কম অস্থির ছিল। তাই এটি জায়েজ হওয়ার কথা! উপরের সবকিছুই স্রেফ যুক্তি। শরয়ী উসুলের আলোকে তা টিকবে না। কিন্তু শরীয়ত এখানেও কথা বলেছে। এগুলোকে বই, পিডিএফ এর সত্ত্বাধিকারীর বিষয়টি শরীয়তে بيع الحقوق، حقوق الطبع، ইত্যাদি পরিভাষায় নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ নিজেদের কোন পণ্যের সত্ত্বাধিকারী বিক্রয় করা, যেমন প্রকাশনা সত্ত্বাধিকারী, কোর্সের সত্ত্বাধিকারী ইত্যাদি বিক্রি করা। এগুলা জায়েজ। কারণ বর্তমানে এগুলা পণ্যের স্থানে। এব্যাপারে বুহুস ফি ক্বযায়া মুআসিরাহ এবং ফিক্বহুল বুয়ু আল্লামা মুফতি তাক্বি উসমানি সাহেব আলোচনা করেছেন। এসব সফটওয়্যার, পিডিএফ এগুলো বর্তমানে মালে মুতাক্বাওওয়িম তথা মুল্যমান বলেছেন, সমস্ত ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন। তাই বিক্রিতে সমস্যা নাই। আর কিছু কিছু রাষ্ট্র যদিও বৈধতা দেয়, কিন্তু সেটি মুল্যমান হতে হলে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা দরকার, নতুবা কিছু দেশে চালু হলেই তা মুল্যমান স্বীকৃতি লাভ করে না। এবং তা ধোঁকা, প্রতারণা মুক্ত থাকতে হবে, প্রকাশকের অজ্ঞতাই বড় রিস্কের কারণ! আর এ কথা সঠিক যে টাকার তুলনায় গত একবছর বিটকয়েনের রেট কম আপডাউন করেছিলো। কিন্তু বিটকয়েনের রেট আপডাউনের অবস্থা সবসময়ই ভয়াবহ। এর অস্তিত্ব না থাকার কারণে এখানে বিনিয়োগ পুরাটাই জুয়া। পঞ্চম বিষয়ঃ বিটকয়েন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে বিশ্বের গ্রহণযোগ্য ফতোয়া বিভাগগুলো যেমন বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ, পাকিস্তানের জামিয়া বানুরি টাউন, মিশরের দারুল ইফতাসহ অসংখ্য মুফতি উলামায়ে কেরাম এটাকে নাজায়েজ বলেছেন। "তেজারত কা মাসায়েল কা এনাসাইক্লোপিডিয়া" এর দ্বিতীয় খণ্ডের ৯২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে : آج کل عالمی مارکیٹ میں ایک کوئن رائج ہے جسے ’’بٹ کوئن‘‘ یا ’’ڈیجیٹل کرنسی‘‘ کہتے ہیں،یہ ایک محض فرضی کرنسی ہے، اس میں حقیقی کرنسی کے بنیادی اوصاف اور شرائط بالکل موجود نہیں ہیں،لہٰذا موجودہ زمانہ میں ’’کوئن‘‘ یا ’’ ڈیجیٹل کرنسی‘‘ کی خرید وفروخت کے نام سے انٹر نیٹ پر اور الیکٹرونک مارکیٹ میں جو کاروبار چل رہا ہے، وہ حلال اور جائز نہیں ہے، وہ محض دھوکہ ہے، اس میں حقیقت میں کوئی مبیع وغیرہ مادی چیز نہیں ہوتی ، اور اس میں قبضہ بھی نہیں ہوتا، صرف اکاؤنٹ میں کچھ عدد آجاتے ہیں، اور یہ فاریکس ٹریڈنگ کی طرح سود اور جوے کی ایک شکل ہے؛ اس لیے ’’بٹ کوئن‘‘ یا کسی بھی ’’ڈیجیٹل کرنسی‘‘ کے نام سے نہاد کاروبار میں پیسے لگانا اور خرید وفروخت میں شامل ہونا جائز نہیں ہے۔ ‘‘(ص:٩٢،ج:٢،حرف باء،بٹ کوئن،ط:بیت العمار،کراچی) "বর্তমানে বিশ্ববাজারে একটি মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে, যাকে ‘বিটকয়েন’ বা ‘ডিজিটাল কারেন্সি’ বলা হয়। এটি এক প্রকার কাল্পনিক মুদ্রা, যার মধ্যে বাস্তব মুদ্রার প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য ও শর্ত নেই। এ কারণে বর্তমানে ‘কয়েন’ বা ‘ডিজিটাল কারেন্সি’ নামে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক বাজারে যে ব্যবসা চলছে, তা বৈধ নয়। এটি আসলে প্রতারণার শামিল, কারণ এতে কোনো প্রকৃত বস্তুর অস্তিত্ব নেই, এবং হস্তান্তরও সম্ভব হয় না, কেবল অ্যাকাউন্টে কিছু সংখ্যা যুক্ত হয়, যা মূলত ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো সুদ ও জুয়ার এক ধরণ। তাই ‘বিটকয়েন’ বা যেকোনো ‘ডিজিটাল কারেন্সি’তে বিনিয়োগ করা বা কেনাবেচায় অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়।" (পৃষ্ঠা: ৯২, খণ্ড: ২) দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে বিটকয়েন সম্পর্কে জানতে চাইলে লম্বা ফতোয়া প্রকাশ করেছে। বিস্তারিত বলেছে। দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছেঃ "বিটকয়েন বা অন্য কোনও ডিজিটাল মুদ্রা একটি কেবল কল্পনাপ্রসূত মুদ্রা। এর মধ্যে প্রকৃত মুদ্রার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি নেই। বর্তমানে বটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রার কেনাবেচার নামে যে ব্যবসা চলছে, তা আসলে একটি প্রতারণা; এর মধ্যে বাস্তবিকভাবে কোনও পণ্য বা বস্তু নেই এবং এই ব্যবসায়ে বেচাকেনার বৈধতার শারীয় শর্তগুলি পাওয়া যায় না। বরং এটি বাস্তবে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো সুদ এবং জুয়ার রূপ। সুতরাং, বিটকয়েন বা অন্য কোনও ডিজিটাল মুদ্রার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে চলমান এই ব্যবসা শরিয়া অনুযায়ী বৈধ নয়। অতএব, বিটকয়েন বা অন্য কোনও ডিজিটাল মুদ্রার নামের এই ব্যবসায়ে অংশগ্রহণ করা বা অন্য কাউকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে দেওয়া উচিত নয়। আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন মুদ্রাগুলি প্রকৃতপক্ষে সম্পদ নয়; এগুলি কেবল কাগজের টুকরা। এগুলোর মধ্যে যে মূল্য বা পরিচিত মূল্য আছে, তা দুই কারণে হয়; প্রথমত, এর পেছনে দেশের অর্থনৈতিক উপাদান থাকে; এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অবনতি মুদ্রার মূল্যকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ, অর্থনীতির কারণেই দেশের মুদ্রার মূল্য বাড়ে এবং কমে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি দেশ জনগণের জন্য তাদের মুদ্রার জন্য একটি গ্যারান্টি এবং দায়িত্বশীল থাকে; এ কারণেই যখন একটি দেশ তাদের কোনো মুদ্রা বন্ধ করে, তখন মুদ্রাটি কেবল কাগজের নোট হয়ে যায় এবং এর কোনো মূল্য বা মর্যাদা থাকে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ডিজিটাল মুদ্রার পেছনে কী আছে যার কারণে এর মূল্য নির্ধারিত হয় এবং এর উন্নতি ও অবনতি থেকে মুদ্রার মূল্য বাড়ে এবং কমে? সেই সঙ্গে, এই মুদ্রার গ্যারান্টি ও দায়িত্ব কে? এবং মুদ্রার পেছনে যে কিছু থাকে, তা কি সত্যিকার অর্থে গ্যারান্টির নিয়ন্ত্রণে আছে, নাকি এটি কেবল কাল্পনিক ও প্রতীকী? ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখাগুলি পড়ার পর এবং এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পর, জানা গেল যে ডিজিটাল মুদ্রা কেবল একটি কাল্পনিক বিষয়। এর শিরোনাম হাতির দাঁতের মতো, যা কেবল দেখানোর জন্য; এবং বাস্তবে এটি ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো ইন্টারনেটে চলমান জুয়া ও সুদের ব্যবসার একটি রূপ। এতে প্রকৃতপক্ষে কোনো ক্রিয়াকলাপ বা পণ্য নেই এবং এই ব্যবসায় বাণিজ্যের বৈধতা সম্পর্কিত শরীয়তের শর্তাবলিও নেই। সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায় যে, বিটকয়েন বা অন্য কোনো ডিজিটাল মুদ্রা কেবল একটি কাল্পনিক মুদ্রা, এটি বাস্তব এবং প্রকৃত মুদ্রা নয়। এছাড়া কোনো ডিজিটাল মুদ্রায় বাস্তব মুদ্রার মৌলিক গুণাবলী নেই। ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবসায় জুয়া ও সুদের উপাদান স্পষ্টভাবে দেখা যায়; তাই বিটকয়েন বা অন্য কোনো ডিজিটাল মুদ্রার কেনাবেচা বৈধ নয়। একইভাবে, বিটকয়েন বা অন্য কোনো ডিজিটাল মুদ্রার বাণিজ্যও ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো অবৈধ; সুতরাং এই ব্যবসা থেকে বিরত থাকা উচিত। বাস্তবে এটি ফরেক্স ট্রেডিং ইত্যাদির মতো ইন্টারনেটে চলমান জুয়া ও সুদের ব্যবসার একটি রূপ। এতে প্রকৃতপক্ষে কোনো পণ্য বা সম্পদ নেই এবং এর ব্যবসায় বাণিজ্যের বৈধতা সম্পর্কিত শরীয়তের শর্তাবলিও নেই। সুতরাং, যদি প্রকৃতপক্ষে এটি এমনটাই হয় (যেমন প্রকাশ্যে বোঝা যাচ্ছে), তাহলে নির্দেশ হবে যে ডিজিটাল মুদ্রায় টাকা লগ্নি করা বা এর জন্য কাউকে কোম্পানির সদস্য হিসেবে যুক্ত করা বৈধ নয়; কারণ ইসলামিতে জুয়া এবং সুদের ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও অবৈধ। তবে, যদি এই মুদ্রা সত্যিকার অর্থে একটি মুদ্রা হয়ে যায়, কেবল ডিজিটাল না থাকে এবং এর প্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে প্রকৃত মুদ্রার মতো হয়ে যায়, তবে এর নিয়ম সাধারণ মুদ্রার মতো হবে।" (১) তবে বিটকয়েনের লেনদেন জায়েজ হতে হলে কিছু শর্ত আছেঃ রাষ্ট্রীয়ভাবে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত হতে হবে। জনসাধারন এই লেনদেনের ধোঁকা, প্রতারণা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হতে হবে। সহজলভ্য হতে হবে। রেট অস্বাভাবিক রকমের আপডাউন হতে পারবে না, স্থিতিশীল হতে হবে। এর প্রকাশক অজ্ঞাত হতে পারবে না। উপরোক্ত শর্তগুলি পরিপূর্ণ পেতে হবে। সবকিছু পর্যালোচনার পরে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যেঃ বিটকয়েন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং এজাতীয় ডিজিটাল কয়েনের লেনদেন মৌলিকভাবে জায়েজ নাই। তবে উপরোক্ত শর্তগুলি পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া গেলে এটিকে মুদ্রা বলে গন্য করা হবে এবং শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ি লেনদেন বৈধ হবে।
বিস্তারিত পড়ুন

বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ তৃতীয় পর্ব

Hm Sulayman

১৬ এপ্রিল, ২০২৫

বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ দ্বিতীয় পর্বে বিটকয়েন কেন মুদ্রা নয়, কি কি অসঙ্গতি রয়েছে সেসব বিষয়গুলি তুলে ধরেছি। প্রথম বিষয় হচ্ছে - ফুক্বাহায়ে কেরাম মুদ্রা গণ্য হওয়ার জন্য কিছু শর্ত করেন। তারমধ্যে যেমন - জনসাধারণের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর প্রচলন শুরু হবে। অর্থাৎ এটির ব্যাপক প্রচলন হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সেটির বৈধতা থাকার কারণে। খোদ রাষ্ট্রই কোন বস্তুকে মুদ্রার জন্য আখ্যায়িত করবে। যেমন আমাদের দেশে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকাকে মুদ্রা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর মুদ্রা বা টাকা হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য এটা অন্যতম শর্ত। এই জন্য হানাফি মাজহাবের এ্যানাসাইক্লোপিডিয়া খ্যাত কিতাব "আল হিদায়া" গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে এই বিষয়ে বলা হয়েছেঃ قوله: ويجوز بيع الفلس بالفلسين باعيانهما عند أبى حنيفة وابى يوسف وقال محمد لا يجوز لأن الثمنية ثبت باصطلاح الكل... بخلاف النقود لأنها للثمنية خلقة অর্থাৎ মুদ্রা পরিগনিত হবে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচলন এবং স্বীকৃতির মাধ্যমে। এটা ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ এর মত। (আল হিদায়া : ৮১/৩) উল্লেখিত শর্তাবলির কোনটিই পাওয়া যায় না এখানে। তাই এটি মুদ্রাই নয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে - এছাড়াও যেটি মুদ্রা হবে, তার অন্যতম একটি বিষয় হলো সেটি মৌলিকভাবে ধোঁকা, প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকবে, কোন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে না। কিন্তু বিটকয়েন এটি জুয়ার মতই এবং ধোঁকা খাওয়া প্রতারিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি রাতারাতি পরিবর্তন হয়,দাম আকাশছোয়া হয়, আবার কমে যায়, এবং এই কয়েন অনেক সময় হ্যাক হয়ে যায়। অথচ এরকম লেনদেন মানব জীবনে বড় বিপর্যয়ের কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ قال اللّٰہ تعالی: یٰأیھا الذین آمنوا إنما الخمر والمیسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشیطن فاجتنبوہ لعلکم تفلحون ( المائدة، ۹۰) “হে বিশ্বাসীরা! নিঃসন্দেহে মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা এবং ভাগ্য নির্ধারণের তাস-প্রথা শয়তানের কাজ; সুতরাং এগুলি থেকে দূরে থাকো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সুরা মায়েদা: ৯০) অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَلَا تَأْکُلُوْا أَمْوَالَکُمْ بَیْنَکُمْ بِالْبَاطِلِ﴾ أي بالحرام، یعني بالربا، والقمار، والغصب والسرقة (معالم التنزیل ۲: ۵۰) “আর নিজেদের মধ্যে অগ্রহণযোগ্য উপায়ে (অর্থাৎ হারাম উপায়ে) তোমাদের সম্পদ খাবে না।” অর্থাৎ সুদ, জুয়া, দখল ও চুরি। (মাআলিমুত তানযিল : ৫০/২) জুয়ার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লামা শামি রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ، لأن القمار من القمر الذي یزداد تارةً وینقص أخریٰ۔ وسمی القمار قمارًا؛ لأن کل واحد من المقامرین ممن یجوز أن یذہب مالہ إلی صاحبہ، ویجوز أن یستفید مال صاحبہ، وہو حرام بالنص (رد المحتار، کتاب الحظر والإباحة، باب الاستبراء، فصل في البیع، ۹: ۵۷۷، ط: مکتبة زکریا) কারণ জুয়া এমন একটি বিষয়, যা একবার বাড়ে, একবার কমে। জুয়াকে জুয়া বলা হয়; কারণ প্রতিটি জুয়াড়ির জন্য অনুমোদিত যে তার সম্পদ অন্যের কাছে চলে যেতে পারে এবং অন্যের সম্পদ থেকে লাভ গ্রহণ করা যেতে পারে। এবং এটি স্পষ্টতই হারাম। (রদ্দুল মুহতার: ৫৭৭/৯) তৃতীয় আরেকটি বিষয় হলো - বিটকয়েনকে যদি মুদ্রা ধরেও নিই (যদিও এটি মুদ্রা নয়) এবং টাকার বিনিময়ে যদি এটাকে ক্রয় করতে হয়, তাহলে এটি শরয়ী পরিভাষায় "বাইয়ুস সারফ" তথা যে চুক্তিতে উভয় পক্ষেই মুদ্রা-দ্রব্য থাকে। এখন যদি বিটকয়েনকে বিটকয়েনের মোকাবেলায় বিক্রি করা হয় তাহলে সেখানে মজলিসেই উভয় পক্ষেরই তা হস্তগত করা আবশ্যক। যেমনটা হেদায়ার মধ্যে এসেছেঃ قوله: وعقد الصرف ما وقع على جنس الاثمان يعتبر فيه قبض العوضيه فى المجلس ....وما سواه مما فيه الربوا يعتبر فيه التعيين ولا يعتبر فيه التقابض "বাইয়ুস সারফের মধ্যে চুক্তির মজলিসেই হস্তগত করা আবশ্যক" (হেদায়া : ৮০/৩) আর বিটকয়েনকে ভিন্ন দেশের কারেন্সির বিনিময়ে বিক্রি করলে মাসআলা হলো: এক দেশের কারেন্সি আরেক দেশের কারেন্সির বিনিময়ে কম-বেশি করে বিক্রি করা জায়েজ আছে। তবে সেক্ষেত্রেও বৈঠকেই কমপক্ষে একপক্ষকে টাকাটি হস্তগত করে নিতে হবে। যদি একজনও তাদের বিনিময়কৃত কারেন্সি হস্তগত না করে, তাহলে ক্রয়-বিক্রয়টি জায়েজ হবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়িল: ৪/২৮; জাদিদ মুআমালাত কে শরয়ি আহকাম: ১-১৩৯) কিন্তু সেটা বিটকয়েনে পাওয়া যায় না। এছাড়াও বিটকয়েন কখনোই স্বর্ণ রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত নয়, যেমনটা প্রচলিত টাকা পয়সা। বিটকয়েনের ট্রানজেকশন, লেনদেন সবকিছুই অজ্ঞাত, এটি সহজলভ্য নয়,সব মানুষ এটা ব্যাবহার করতে পারে না, যেটা শরয়ী কারেন্সি নীতি বহির্ভূত বিষয়। তাছাড়া এটি অজ্ঞাত এবং এর পরিচালক জানা যায় না, তাই মানুষের সম্পদ সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যেই থাকে, যা শরীয়তে নিষেধ। যেহেতু এই মুদ্রা শুধু মাত্র ইলেক্ট্রোনিক্যালি জমা থাকে, তাই আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটিং ডিভাইজ যদি ক্র্যাশ হয়ে যায় কিংবা আপনি যদি অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড ভুলে যান তবে, আপনার সকল কয়েন গায়েব হয়ে যাবে। এবং আপনি কখনোই এই কয়েন গুলো রিকভার করতে পারবেন না। বিটকয়েন লেনদেন পুনরাবৃত্তি না করতে না পারা, সেবা গ্রহিতা সংশ্লিষ্ট সেবা না পেলে, মুদ্রা ফেরত পাওয়ার কোন উপায় নেই।
বিস্তারিত পড়ুন

বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ দ্বিতীয় পর্ব

Hm Sulayman

১৬ এপ্রিল, ২০২৫

বিটকয়েন মুলত কি, ক্রিপ্টোকারেন্সি কাকে বলে - এসবের বাস্তবতা নিয়ে বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ প্রথম পর্বে কমবেশি লেখা হয়েছে। এখন আমরা বিটকয়েন/ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের শরয়ী বিধান নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন এটি আদতে বৈধ নাকি অবৈধ এটি নির্ভর করবে বিটকয়েনের সত্ত্বার উপর বিবেচনা করে। এটি মুলত কি? এটি কি কোন মুদ্রা? এটি কি বিনিময়যোগ্য? ইত্যাদি বিষয় সামনে আসবে। দেখুন, এই বিটকয়েন লেনদেন বৈধ হতে হলে সবার পূর্বে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে, যাচাই করতে হবে। বিটকয়েনের ব্যাপারে যাচাই করার মত বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। তারমধ্যে মৌলিকভাবে উল্লেখযোগ্য হলোঃ বিটকয়েন প্রকাশকের অজ্ঞতা। এটির প্রকাশক কে বা কারা, নিয়ন্ত্রন করা করে জানা যায় না। এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা। এটির স্থায়িত্ব বা গ্যারান্টি নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রকাশক নেই। কেন্দ্রিয়ভাবে এর দ্বায়ভার বা যিম্মাদারও নেই। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ নেই। এর কোন সেন্ট্রালাইজড কন্ট্রোল নাই। এতে ব্যাপকভাবে স্প্যাকুলেশন হয়। এর মূল্য স্থীর থাকে না। রাতারাতি দামে আপডাউন হয়। আইন বহির্ভূত কাজে অধিক ব্যবহার হওয়া। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মালে মুতাকাওয়্যিম তথা মূল্যমান বিশিষ্ট হবে কিনা তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। উপরের প্রত্যেকটি বিষয়ই বিটকয়েন জায়েজ-নাজায়েজ হওয়ার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। কেননা উপরোল্লেখিত বিষয়ের দ্বারাই কোন বস্তু লেনদেনের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে অথবা হারিয়ে ফেলে। কোন বস্তু লেনদেনের যোগ্যতা অর্জন শরীয়ত সম্মত পন্থায় বিনিময় করতে গেলে তাকে মুল্যমান সমৃদ্ধ বস্তু হতে হবে। কিন্তু উক্ত বিষয়গুলো বিটকয়েনের মধ্যে পাওয়ার কারণে বিটকয়েন তার শরয়ী বিনিময় যোগ্যতা বা মুল্যমান হারিয়ে ফেলেছে। বিটকয়েন আসলে পারিভাষিক দৃষ্টিকোন তথা বাস্তবতার বিবেচনায় কোন স্বীকৃত মুদ্রা নয়। যদিও এর দ্বারা চলমান বিশ্বে লেনদেনের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। মুদ্রা হতে হলে বেশকিছু বিষয়ের প্রতি ফোকাস রাখা আবশ্যক। এব্যাপারে আইএফএ কনসালটেন্সি এর মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম হাফিজাহুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ মুদ্রার পরিচয় দিতে যেয়ে বলেনঃ অর্থনীতিবিদ ও ফকীহদের দৃষ্টিতে মুদ্রার চারটি বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক কাজ (Economic Activities) রয়েছে। যথা- Medium of Exchange: এর সারকথা হল, যে জিনসটি মুদ্রা হবে তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে-যেকোন কিছু ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তা কাজ করবে। Widely Acceptable: এর সারকথা হল, যে জিনিষটি মুদ্রা হবে সেটার জন্য জরুরী হল-তা ব্যাপকভাবে কোনও প্রকার দলীল-প্রমাণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য হওয়া। এর বিপরীতে কাংখিত বস্তু দিতে প্রস্তুত হওয়া। এর জন্য একটি অন্যতম শর্ত হল, দেশীয় আইনে তা অস্বীকার না করা। Standard of Value/Measure of Value: এর সারকথা হল, কাপড়ে দীর্ঘতা মিটার বা গজে মাপা হয়। চাউল-গমের পরিমাণ ওযনের মাধ্যমে জানা যায়। তেমনি এসব বস্তুর ভেল্যু পরিমাপ করার মাধ্যম হল মুদ্রা। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যল্যু সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হবে। যেমন, বলা হয় ঘড়িটির মূল্য দুইশত টাকা। বইটির মূল্য তিনশত টাকা। Store of Value: এর সারকথা হল, মানুষ সম্পদ সঞ্চয় করে। ভবিষ্যতে তা কাজে আসে। সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য এমন কিছু দরকার, যার মূল্যমান সাধারণত হ্রাস হবে না। নষ্ট হবে না। এর দ্বারা নিজ সম্পদের ভ্যাল্যু সংরক্ষণ করা যাবে। এটি করার মাধ্যম হল-মুদ্রা। এক লক্ষ টাকা আপনার কাছে থাকার অর্থই হল, এ পরিমাণ সম্পদের ভ্যাল্যু আপনার কাছে আছে। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যাল্যু সহজেই সংরক্ষণ করা যায়। সারকথা, এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কোন কিছুকে মুদ্রা বলতে হলে আগে দেখতে হবে তার মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না। কোন একটা বৈশিষ্ট্য না থাকলে সেটা মুদ্রা হবে না। আলোচিত বিটকয়েনে-অন্তত আমাদের দেশে-দ্বিতীয় গুণটি নেই। কারণ এটি ব্যাপকভাবে গৃহিত নয়। সরকারীভাবেও অনুমোদিত নয়। সুতরাং একে আমাদের দেশে শরঈ ও অর্থনীতি কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই কারেন্সি বা মুদ্রা বলা যায় না। বিশেষত সরকারীভাবে এর লেনদেন আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়। আরো সংক্ষেপে বললে, বিটকয়েন শরঈভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার মৌলিক কারণ তিনটি। যথা- গারার তথা ধোঁকা (Uncertainty), জাহালাহ (অজ্ঞতা) ও গ্যামব্লিং। মূলত বিটকয়েনের প্রকাশকের অজ্ঞতা, এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা, এটি সেন্ট্রালাইজড না হওয়া, তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ না হওয়া থেকেই এসব গারার ও জাহালাহ-এর সৃষ্টি। নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যম হওয়া। এসব বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি মূল্যমান বিশিষ্ট সম্পদ না হওয়া। উপরোক্ত বিষয় থেকে বেশকিছু বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। বিশেষত মুদ্রার যেই বৈশিষ্ট সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া এই মুদ্রার কোন গ্যারান্টার নাই। এই মুদ্রার দাম আপ-ডাউনের ক্ষেত্রে সীমাতিরিক্ত। স্থিতিশীল নয়। মুদ্রার যেই শরয়ী পরিচয় তার তেমন কিছুই নেই এরমধ্যে। শরীয়তে কোন পণ্যের বিনিময় মুল্য হিসেবে স্বর্ণ এবং রুপাকে মুল মুদ্রা হিসেবে ধর্তব্য করা হয়েছে। তাই ইসলামে মুদ্রা ব্যবস্থা বলতে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাকে বুঝানো হয়ে থাকে। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে নিয়ে সব খলিফা ও সুলতানদের আমলে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন ছিলো সর্বসাকুল্যে। কাগজের মুদ্রা ব্যবস্থা আসার আগ পর্যন্ত স্বর্ণের বা রূপার কয়েন ছিলো সকল মুসলিমের মুদ্রা। কাগজের মুদ্রার প্রচলন হওয়ার পর থেকে সেটা আর থাকেনি। কাগজের মুদ্রা গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পেছনে যে কারণটি ছিলো সেটি হলো, গ্রাহকের হাতে থাকে কাগজের মুদ্রাটি কেবল মূল স্বর্ণ বা রৌপ মুদ্রার এভিডেন্স। এর অর্থ হলো গ্রাহকের হাতে থাকা কাগজের মুদ্রার বিপরীতে জাতীয় ব্যাংকে স্বর্ণ বা রৌপ্য গচ্ছিত রয়েছে। তার প্রমাণ হিসাবে গ্রাহক কেবল কাগজকের এই নোটগুলো বহন করছে। এ জন্যই কাগজের নোটের মধ্যে লেখা থাকে "চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।" সেই সাথে মূল মুদ্রা দ্বারা যেসব কাজ করা যেতো এই কাগজের মুদ্রা দ্বারা সে সব কাজ কারার এখতিয়ার জাতীয় ব্যাংক দিয়ে রেখেছে। চোর ডাকাত ছিনতাইকারীর হাত থেকে নিজের অর্থগুলোকে রক্ষা করার একটি কার্যকরী উপায় হয়ে ওঠে কাগজের মুদ্রা। তাই সকলে এটি গ্রহণ করে নেয়। বিপরীতে বিটকয়েনের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা, নিশ্চয়তা এসবের কিছুই নাই। বরং এটি শুধুমাত্র স্ক্রিনে প্রদর্শিত একটি সংখ্যা মাত্র। এটি মুলত অস্তিত্বহীন। শরীয়তে এজাতীয় জিনিস লেনদেনের মাধ্যম হতে পারে না। যেমন ফতোয়ায়ে আলমগিরির মধ্যে এসেছেঃ "أن يكون موجودا فلا ينعقد بيع المعدوم وما له خطر العدم كبيع نتاج النتاج والحمل كذا في البدائع."(ص:٢،ج:٣،کتاب البیوع، الباب الأول،ط:دار الفكر،بيروت) "যেটি ক্রয় বিক্রয় করা হবে, সেটি অস্তিত্বে থাকা, বিদ্যমান থাকা। (অর্থাৎ যে বস্তু অস্তিত্বে আছে তা-ই বিক্রয়যোগ্য।) সুতরাং অস্তিত্বহীন বস্তু বা যা অনুপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন: প্রাণীর গর্ভস্থ সন্তান বা অনাগত ফল, এসব বিক্রয় বৈধ নয়।" (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: পৃষ্ঠা: ২, খণ্ড: ৩, কিতাবুল বয়ূ, প্রথম অধ্যায়, প্রকাশক: দারুল ফিকর, বৈরুত) এজাতীয় জিনিস ক্রয় বিক্রয়ের বস্তু হতে পারে না। তাছাড়া এটি হস্তান্তরযোগ্য নয়। অথচ ক্রয় বিক্রয়ের অন্যতম শর্তই হচ্ছে যে বস্তু হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে। যেমন বাদাইয়ুস সানাই কিতাবের মধ্যে আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ "(ومنها) أن يكون مقدور التسليم عند العقد، فإن كان معجوز التسليم عنده لا ينعقد، وإن كان مملوكا له." (بدائع الصنائع: ص:١٤٧،ج:٥،کتاب البیوع،فصل فی الشرط الذی يرجع إلي المعقود عليه،ط:دار الكتب العلمية) "ক্রয় বিক্রয় চুক্তি সহীহ হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো, চুক্তির সময় সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য থাকতে হবে। যদি চুক্তির সময় সম্পত্তি হস্তান্তরের সামর্থ্য না থাকে, তবে সেই চুক্তি বাতিল হবে, যদিও তা চুক্তিকারীর মালিকানায় থাকে।" (বাদাইয়ুস সানাই: পৃষ্ঠা: ১৪৭, খণ্ড: ৫, দারুল কুতুবুল ইলমিয়্যাহ) আল্লামা ইবনুল হুমাম রাহিমাহুল্লাহ ফাতহুল কাদিরের মধ্যে বলেছেনঃ "قال (ولا بيع الطير في الهواء) لأنه غير مملوك قبل الأخذ، وكذا لو أرسله من يده لأنه غير ‌مقدور ‌التسليم. (قوله ولا بيع الطير في الهواء؛ لأنه قبل أخذه غير مملوك، وبعد أخذه وإرساله غير ‌مقدور ‌التسليم) عقيب العقد، ثم لو قدر على التسليم بعد ذلك لا يعود إلى الجواز عند مشايخ بلخ، وعلى قول الكرخي يعود، وكذا عن الطحاوي (ص:٤١٠،ج:٦،کتاب البیوع،باب البیع الفاسد،ط:دار الفکر،بیروت) "বাতাসে থাকা পাখি বিক্রয় করা যাবে না, কারণ এটি ধরা পড়ার আগে মালিকানাধীন নয়, আর ধরার পর হাত থেকে ছেড়ে দিলে সেটি হস্তান্তরযোগ্য থাকে না। যদি পরবর্তীতে হস্তান্তর সক্ষম হয়, তবু বালখের (একটি এলাকার নাম) মাশায়েখদের মতে এটির বৈধতা ফিরে আসবে না, যদিও ইমাম কারখী ও ইমাম ত্বহাভি রাহিমাহুমাল্লাহ এর মতে ফিরে আসবে। (পৃষ্ঠা: ৪১০, খণ্ড: ৬, দারুল ফিকর, বৈরুত) আল্লামা ইবনু নুজাইম রাহিমাহুল্লাহও একই কথা বলেছেনঃ "(قوله والطير في الهواء) أي لا يجوز لأنه غير مملوك قبل الأخذ فيكون باطلا، وكذا لو باعه بعد ما أرسله من يده لأنه غير ‌مقدور ‌التسليم فيكون فاسدا، ولو أسلمه بعده لا يعود إلى الجواز عند مشايخ بلخ، وعلى قول الكرخي يعود، وكذا عن الطحاويأطلقه فشمل ما إذا جعل الطير مبيعا أو ‌ثمنا."(ص:٨٠،ج:٦،کتاب البيوع،باب البيع الفاسد،ط:دار الکتاب الإسلامي) ( আল বাহরুর রায়িক: ৮০/৬, দারুল কুততুবুল ইলমিয়্যাহ) উপরের দুই রেফারেন্স দ্বারা বোঝা গেলো যে হস্তান্তরযোগ্য নয় এবং অস্তিত্বহীন জিনিস ক্রয় বিক্রয় বৈধ নয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে : এই মুদ্রার দাম আপ-ডাউনের ক্ষেত্রে সীমাতিরিক্ত। স্থিতিশীল নয়। এর ফলে গ্রাহক সর্বচ্চো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। মিনিটে মিনিটে এর দাম আপডাউন হতে পারে। আর এর দ্বারা গ্রাহকের ক্ষতি সুনিশ্চিত। আর শরীয়তে এমন কোন লেনদেনের রাস্তা রাখেনি, যার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছেঃ বিটকয়েন কোনভাবেই মুদ্রা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। কারণ টাকা নিজেই বিনিয়োগের জায়গা হয় না, বরং টাকা দিয়েই কোন বস্তুর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়। পক্ষান্তরে আপনি যদি বিটকয়েনকে মুদ্রা বা টাকা বলে গন্য করেন: বিটকয়েন সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের জায়গা, সেখানে ইনভেস্ট করা যাচ্ছে, যেটা তাকে মুদ্রা হওয়া থেকে বের করে দেয়। তাছাড়া এর মধ্যে জুয়া বা ধোঁকার মত রয়েছে। কারণ এটি কাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে বা এর ভ্যালিডিটি কি তার কোন নির্ভরযোগ্যতা নাই। সর্বপোরি এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে বোঝা যায় যেঃ বিটকয়েনের লেনদেন শরয়ীভাবে বিধিবদ্ধ নয়, জায়েজ নয়।
বিস্তারিত পড়ুন

বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ প্রথম পর্ব

Hm Sulayman

১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিটকয়েনের পরিচয়, বাস্তবতা বর্তমান সময়ে অনলাইনে সবচাইতে জনপ্রিয় বহুল আলোচিত একটি লেনদেনের নাম হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সির অনেকগুলো লেনদেন পদ্ধতি আছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম এটা। যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইট কয়েন, রিপল, বিনান্স কয়েন সহ ক্রিপ্টোকারেন্সির আরো একাধিক প্রকার আছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের মধ্যে বিটকয়েন সবচাইতে বহুল প্রচলিত এবং লাভজনক(!) কিন্তু প্রতিটি লেনদেন বুঝতে হলে, শরীয়ত সম্মত হতে হলে সর্বপ্রথম সেটার পরিচিতি, প্রকারভেদ এবং পদ্ধতি জানা আবাশ্যক। আমরা আজকের এই পর্বে মৌলিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কাকে বলে, তার প্রকৃতি কি, এর প্রতিষ্ঠাতা কে এবং এর প্রকারভেদ, লেনদেন সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিচয় ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি নতুন লেনদেনের উপায়। বলা যেতে পারে ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একপ্রকার Digital Currency Of Cash। Crypto শব্দ টির অর্থ হল Secret বা গোপন এবং Currency শব্দের মানে হল অর্থ যার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্যের আগান প্রদান করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি এর অর্থ হলো গোপনঅর্থ। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি Encrypted Currency যেখানে লেনদেন সম্পূর্ণ গোপন থাকে এবং এর উপরে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির হাত থাকে না। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। এটিই এই লেনদেনের বৈশিষ্ট। ১৯৮৩ সালে এই ক্রিপটোকারেন্সি বা গুপ্ত মুদ্রা সূচনা হয়েছিল। এখন সবচাইতে ফেমাস লেনদেনে পরিণত হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে - ক্রিপটোকারেন্সি নোট বা কয়েনের মতো ছাপা কোনো আক্ষরিক সংখ্যা নেই। অর্থাৎ সহজে বললে এমন একটি মুদ্রা, যা অদৃশ্য, সংকেত বা নাম্বারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, এর না আছে নিজস্ব বস্তুগত কোন আকার, না তা স্পর্শযোগ্য। তেমনিভাবে এর না আছে নিজস্ব কোন মূল্যমান বা উপকারিতা (Intrinsic Value)। এটি ডিজিট আকারে অনলাইনে থাকায় একে ডিজিটাল মানি বা ভার্চুয়াল মানি বা ইলেক্ট্রনিক মানি বলা হয় ক্রিপটোকারেন্সির মধ্য দিয়ে আপনি পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন কিন্তু এটিকে ব্যাংকে বা লকার বা আপনি আপনার পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবেন না। ক্রিপ্টো কারেন্সির একটি ভ্যালু রয়েছে যা অন্যান্য কারেন্সি এর ভ্যালুর থেকে কয়েক হাজারগুণ বেশি আবার কম হতেও পারে। এই নির্ভর করে তার জনপ্রিয়তার উপর। ক্রিপটো কারেন্সি এর ভ্যালু অপরিবর্তিত থাকে না, এর ভ্যালু সর্বদা উঠানামা করে। যার ফলে একদিনে ক্রিপটোকারেন্সির ভ্যালু নানান রকমের হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যাবহারের বিভিন্ন দিক রয়েছে। ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে আপনি পন্য কেনাকাটা করতে পারবেন। ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে আপনি অনলাইনে লেনদেন করতে পারবেন। ক্রিপ্টো কারেন্সিকে আপনি দেশ-বিদেশে আদান প্রদান করতে পারবেন। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি একটা কোম্পানির মত। যার অনেকগুলো মুদ্রা রয়েছে। সেই ক্রিপ্টো মুদ্রার একটি হলো বিটকয়েন। বিটকয়েনের পরিচয় মোটামুটি স্পষ্ট। বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সিরই একপ্রকার মুদ্রা। যেটা স্ক্রিনে সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। এটি ভার্চুয়াল মুদ্রা, বাস্তবিক অর্থে কোন অস্তিত্ব নাই,এর কোম্পানি তাকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তৈরী করেছে। বিটকয়েনের কোন নিজস্ব ফেসভ্যালু নেই। আমাদের দেশে যেমন মুদ্রা/টাকা তৈরী হয় সরকারি নিয়ন্ত্রণে, মেশিনে। এবং আদান প্রদানের সময় এর যাবতীয় রেকর্ড সরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। যার ফলে মানি লন্ডারিং করাটাও টাফ ব্যাপার। তাছাড়া আদানপ্রদানে দেরিও হয়। সমস্ত ঝামেলা থেকে বাঁচতে এবং অবৈধ পথ অবলম্বন করতে ক্রিপ্টোকারেন্সি দারুন ভুমিকা রাখে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মুদ্রা তথা বিটকয়েন তৈরীর প্রসেস সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন এর মাধ্যমে কাজ করে। চেইন কথার অর্থ হলো শিকল। সহজ ভাষায় বললে ব্লকচেইন হল একটি চেনের মধ্যে অনেকগুলি ব্লকের সংযুক্ত অবস্থা। যখন ক্রিপটোকারেন্সিতে লেনদেন করা হয় তখন লেনদেনের সমস্ত তথ্য রেকর্ড করে রাখা হয় অর্থাৎ একটি ব্লকে লেনদেনের তথ্য নিরাপত্তার সহিত রাখা হয়। এবং লেনদেন দ্রুত হয়। বিটকয়েন হচ্ছে ভার্চুয়াল টোকেনের মত। যেমন দারাজে ব্যাবহার করি। যার ফলে এটির ব্যাবহার বাড়ছে প্রচুর আকারে। এই ছিলো মোটামুটি বিটকয়েন, ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিচয়। (বিভিন্ন তথ্য অনলাইন থেকে সংগৃহীত, পরিমার্জিত, সংশোধিত)
বিস্তারিত পড়ুন

মেডিকেলে সহশিক্ষার বিধান

Hm Sulayman

২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ডাক্তারি বিদ্যা শিখতে গেলে বর্তমান সময়ে সহশিক্ষার বিকল্প পাওয়া কঠিন, অনুরুপভাবে মহিলা সার্জনের দরকারও বেশ আছে, সেক্ষেত্রে হুকুম কি হবে! নিঃসন্দেহে ডাক্তারি বিদ্যা মহৎ কাজ এবং পেশা। মানব জীবনে এটির গুরুত্ব অপরিসীম। শরীয়তেও এর মর্যাদা অনেক বেশি। তবে প্রতিটি কাজই শরীয়াহ অনুযায়ী হতে হবে। শরীয়াহর বাহিরে যেয়ে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। পর্দা করা ফরজ। যে কোন অবস্থাতেই পর্দা করতে হবে। নুন্যতম ছাড় নাই। হ্যাঁ, যদি কখনো এমন অনন্যোপায় হতে হয়, যখন পর্দা করার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্তেও পর্দা করা সম্ভব হয়নি, যেমন কোন পুরুষ কোন নারীকে হটাৎ দেখে ফেলল, বা কোন নারীর অজান্তে কোন পুরুষ তাকে দেখে ফেললো; তাহলে এসব ক্ষেত্রে ঐ মহিলার গোনাহ হবে না। কোন মহিলার স্বামী বা সন্তান না থাকলেও পর্দার সহিত সে জীবিকা অর্জন করবে। সম্ভব নয়; এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। বরং স্বদিচ্ছার অভাব। পর্দা করা ফরজ, মেডিকেল পড়া, ডাক্তারি বিদ্যা শিক্ষা করা, উচ্চ শিক্ষিত হওয়া ফরজ নয়। ওয়াজিবও নয়। হ্যাঁ; মহিলাদের চিকিৎসার জন্য অবশ্যই মহিলা চিকিৎসক আবশ্যক, জরুরী। সেটার জন্য আলাদা সিস্টেম থাকতে হবে। সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণাগার থাকতে হবে। সেটার ব্যাবস্থা করতে হবে। সারাদিন পুরুষের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করা, প্রশিক্ষণের জন্য পুরুষের শরীর স্পর্শ করা, পুরুষ হয়ে নারীর শরীর স্পর্শ করা এগুলার কোন নুন্যতম সুযোগ নেই। কোথাও যদি এমন হয়, কোন দেশে যদি এমন পরিস্থিতি তৈরী হয় : যেখানে গাইনী ডাক্তার নাই বললেই চলে, কোনভাবেই প্রয়োজন পূর্ণ হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে সহশিক্ষা ব্যাতীত অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকলে হোস্টেল বা ক্লাসে সর্বদা পর্দার মধ্যেই থেকে পড়তে হবে। পর্দা ছাড়া পড়ার কোন অনুমতি নাই। এবং মহিলা পুরুষের শরীর অথবা পুরুষ মহিলার শরীর স্পর্শ করবে না। বরং প্রত্যেকেই নারী নারীকে পুরুষ পুরুষকে দেখবে। অগত্যা কখনো যদি এমন কোন পরিস্থিতি সামনে আসে, যখন গাইরে মাহরামকে স্পর্শ না করে পারা যাচ্ছে না, নিজে এব্যাপারে সর্বচ্চো চেস্টা করার পরেও যদি স্পর্শ না করে থাকা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণের জন্য সাময়ীক অনুমতি আছে। তবে এর জন্য অবশ্যই তাওবাহ করবে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে গাইনী ডাক্তারের সংখ্যা কম হলেও তা এমন নয় যে, তার দ্বারা কোনভাবেই প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে না, বা রোগী মারা যাচ্ছে। শরয়ী পর্দার মধ্যে থেকে যদি প্রশিক্ষণ নেয়া,পড়াশোনা সম্ভব হয়, তাহলে সেটা করার অনুমতি আছে। নতুবা বর্তমান সময়ে মহিলাদের জন্য এরকম।সহশিক্ষা এবং পুরুষের শরীর এভাবে স্পর্শ করার মত কোন পরিস্থির বৈধতা নাই। তাছাড়া শরীয়ত আমাকেই ডাক্তার হওয়ার দায়িত্ব আরোপ করেনি, বা আমি না করলে প্রয়োজন কোনভাবেই পূরণ হচ্ছে না, বিষয়টি এমন নয়। এছাড়াও মহিলা ডাক্তার কোনভাবে না পাওয়া গেলে পরিস্থিতির কারণে, জান বাঁচানোর তাগিদে, অপারাগতা বশত পুরুষ ডাক্তার মহিলা পেশেন্টের চিকিৎসা করতে পারে। অতএব মহিলাদেরও ডাক্তারি পড়তে হবে, এ কথা বলে সার্বক্ষণিক বেপর্দার মধ্যে থাকার সুযোগ নাই। যদি কেউ মেডিকেলে পড়ে, এবং সে বেপর্দায় থাকে, পুরুষের সঙ্গে একান্ত বাধ্য হয়ে জরুরী কথা ছাড়া অতিরিক্ত কোন কথা বলে, গলার স্বর উচু করে; তাহলে এমন মহিলা কবীরা গোনাহে লিপ্ত বলে বিবেচিত হবে। আর পূর্ণাঙ্গ শরয়ী পর্দা সহকারে পড়তে পারলে তার সুযোগ আছে। নোটঃ ডাক্তারি বিদ্যা একটি অত্যন্ত জরুরী বিদ্যা, জীবন বাঁচানোর মত মহৎ কাজ জড়িত এখানে। সেটা শিক্ষা করার ক্ষেত্রেই যখন এতটা শরয়ী পাবন্দি করা জরুরী, শরীয়তের এত বিধি নিষেধ, তাহলে সরকারি চাকুরির জন্য, উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রচলিত সহশিক্ষার বিধান কি হতে পারে, সেটি একজন বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রই বুঝে নিতে পারবে। প্রচলিত সহশিক্ষা ব্যবস্থার যে দৃশ্যপট আর চিত্রায়ন আমাদের সামনে আছে, শরয়ী বিধান অনুযায়ী তা সম্পূর্ণ রুপে নাজায়েজ । দলীল সমূহ ক্বাওয়াইদুল ফিক্বহঃ "إذا تعارض مفسدتان روعي أعظمهما ضرراً بارتکاب أخفهما". (ص/۵۶ ، فقه النوازل :۴/۲۱۴ ، أحکام الجراحة) ফতোয়ায়ে আলমগিরিঃ :امرأة أصابتها قرحة في موضع لایحل للرجل أن ینظر إلیه، لایحل أن ینظر إلیهما، لکن تعلم امرأة تداویها، فإن لم یجدوا امرأة تداویها ولا امرأة تتعلم ذلك إذا علمت، وخیف علیها البلاء والوجع أو الهلاك، فإنه یستر منها کل شيء إلا موضع تلك القرحة، ثم یداویها الرجل ویغض بصره ما استطاع إلا عن ذلك الموضع، ولا فرق في هذا بین ذوات المحارم وغیرهنّ، لأن النظر إلی العورة لایحل بسبب المحرمیة". (۵/۳۳۰ ، کتاب الکراهية، الباب الثامن فیما یحل للرجل النظر الخ) শামিঃ رد المحتار : "إذا کان المرض في سائر بدنها غیر الفرج یجوز النظر إلیه عند الدواء؛ لأنه موضع ضرورة، وإن کان في موضع الفرج، فینبغي أن یعلم امرأة تداویها، فإن لم توجد وخافوا علیها أن تهلك أو یصیبها وجع لاتحتمله یستروا منها کل شيء إلا موضع العلة، ثم یداویها الرجل، ویغضّ بصره ما استطاع إلا عن موضع العلة، ثم یداویها الرجل ویغضّ بصره ما استطاع إلا عن موضع الجرح". (۹/۴۵۳ ، الحظر والإباحة ، فصل في النظر والمسّ তাফসিরে ইবনে কাসিরঃ تفسير ابن كثير :ج: 6 / ص: 44) { وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ } "فقوله تعالى: { وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن } أي: عما حرم الله عليهن من النظر إلى غير أزواجهن. ولهذا ذهب [كثير من العلماء] إلى أنه لا يجوز للمرأة أن تنظر إلى الأجانب بشهوة، ولا بغير شهوة أصلا. واحتج كثير منهم بما رواه أبو داود والترمذي، من حديث الزهري، عن نبهان -مولى أم سلمة -أنه حدثه: أن أم سلمة حدثته: أنها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة، قالت: فبينما نحن عنده أقبل ابن أم مكتوم، فدخل عليه، وذلك بعدما أمرنا بالحجاب، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "احتجبا منه" فقلت: يا رسول الله، أليس هو أعمى لا يبصرنا ولا يعرفنا؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "أو عمياوان أنتما؟ ألستما تبصرانه" . ثم قال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح. وذهب آخرون من العلماء إلى جواز نظرهن إلى الأجانب بغير شهوة، كما ثبت في الصحيح: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم جعل ينظر إلى الحبشة وهم يلعبون بحرابهم يوم العيد في المسجد، وعائشة أم المؤمنين تنظر إليهم من ورائه، وهو يسترها منهم حتى ملت، ورجعت." মাবসুত, সারাখসিঃ (كتاب المبسوط للشيباني :ج: 1 / ص: 464) "ولا بأس بأن تنظر المرأة التي لا نكاح بينها وبين الرجل منه إلى جميع جسده ،ووجهه، ورأسه إلا ما بين سرته إلى ركبته، فإن ذلك عورة ،ولا ينبغي لها أن تنظر إليه...ولا ينبغي لها أن تمس منه قليلا ولا كثيرا إذا كانت شابة يشتهي مثلها ،أو كان شابا يجامع مثله." (رد المحتار :ج: 26 ،ص: 392) আল বাহরুর রায়িকঃ "وفي الأشباه : الخلوة بالأجنبية حرام إلا لملازمة مديونة هربت ودخلت خربة، أو كانت عجوزا شوهاء." (البحر الرائق شرح كنز الدقائق :ج: 3 / ص: 72) "ذكر الإمام أبو العباس القرطبي في كتابه في السماع: ولا يظن من لا فطنة عنده أنا إذا قلنا صوت المرأة عورة أنا نريد بذلك كلامها ؛ لأن ذلك ليس بصحيح،فإنا نجيز الكلام مع النساء الأجانب ومحاورتهن عند الحاجة إلى ذلك ،ولا نجيز لهن رفع أصواتهن ،ولا تمطيطها،ولا تليينها، وتقطيعها لما في ذلك من استمالة الرجال إليهن،وتحريك الشهوات منهم، ومن هذا لم يجز أن تؤذن المرأة." (رد المحتار :ج: 1 ، ص: 101) "قال في تبيين المحارم : وأما فرض الكفاية من العلم ، فهو كل علم لا يستغنى عنه في قوام أمور الدنيا كالطب، والحساب ،والنحو، واللغة، والكلام."
বিস্তারিত পড়ুন

বন্দি মুক্তির পিছনে যাকাত-ফিতরার টাকা খরচের বিধান

Hm Sulayman

২৪ মার্চ, ২০২৫

বন্দি মুক্তির পিছনে যাকাত-ফিতরার টাকা খরচ: বহুল আলোচিত -জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এটি। যাকাত অথবা ফিতরার টাকা বন্দি মুক্তির কাজে খরচ করা যাবে কিনা। দেখুন: যাকাত বা ফিতরা গ্রহনের উপযুক্ত হতে হলে একটি মৌলিক শর্ত আছে। আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট থাকা উচিত যে, যাকাত আদায়ের জন্য আবশ্যক হলো যে: তা কোনো দরিদ্র ও প্রাপ্য ব্যক্তির মালিকানায় প্রদান করতে হবে বা পৌছে দিতে হবে। যদি বন্দি ব্যক্তির মালিকানায় সম্পত্তি বলতে বাসস্থানের বাড়িই আছে। এছাড়া যদি তার মালিকানায় নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রুপা না থাকে তথা সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাষের জমি অথবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত কোন জিনিস, যেগুলোর মুল্য নিসাব পরিমানে পৌছে ;এরকম সম্পদ যদি না থেকে থাকে : তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ। বরং কোনো নিরপরাধ বন্দিকে মুক্ত করার জন্য যাকাত-ফিতরার টাকা খরচ করতে পারাটা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। এখন বন্দি মুক্তির পিছনে টাকাটা খরচ করার পদ্ধতি হলো: উক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে। যেহেতু জেলে তাকে সরাসরি মালিক বানানো কঠিন, তাই এই বিষয়টি আগে তাকে প্রথমে জানিয়ে মৌখিক অনুমতি নিতে হবে। তাকে বলা হবে যেন তিনি কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে নিজের প্রতিনিধি বানান, যিনি তার পক্ষে যাকাত গ্রহণ করে তার মুক্তির জন্য আইনগত প্রক্রিয়ায় খরচ করতে পারে। তিনি যেন তাকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যায়ের অনুমতি দেন কাউকে। যাকে / যাদেরকে অনুমতি দিবেন, তারা উক্ত অর্থ সংগ্রহ করে খরচ করতে পারবেন। তাহলে উক্ত যাকাত-ফিতরা আদায় হয়েছে বলে গন্য হবে। কিন্তু যদি এমন না তথা তার অনুমতি না নিয়ে /তিনি কাউকে প্রতিনিধি না বানালে: যদি তার পরিচিতরা সরাসরি কোনো আইনজীবী বা অন্য কাউকে মুক্তির ফি হিসেবে এই টাকা দেন, তাহলে যেহেতু যাকাতের টাকা দরিদ্র ব্যক্তির মালিকানায় যায়নি, সেহেতু এই কারণে যাকাত-ফিতরা আদায় হবে না। রেফারেন্স: ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৭০, রশিদিয়া "أما تفسيرها فهي تمليك المال من فقير مسلم غير هاشمي، ولا مولاه بشرط قطع المنفعة عن المملك من كل وجه لله تعالى." (كتاب ‌الزكاة،الباب الأول في تفسيرها وصفتها وشرائطها،ج1، ص170، ط:رشيدية) ফতোয়ায়ে শামি: ২/৩৪৪, সাইদ "ويشترط أن يكون الصرف (تمليكا) لا إباحة." (‌‌شامي ، كتاب الزكاة، باب المصرف، ج2، ص344، ط: سعید)
বিস্তারিত পড়ুন

যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন

Hm Sulayman

১৭ মার্চ, ২০২৫

যাকাত দেয়া ফরজ না হলেও যাকাত নিতে পারবে না বা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয়ঃ সমাজে এমন লোকের সংখ্যা খুব বেশি। কাউকে বাহ্যিকভাবে গরীব বা ভ্যান/রিক্সাচালক দেখেই তাকে যাকাতের টাকা দিয়ে দিলে আপনার যাকাত না আদায় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অবশ্যই যাকাত দেয়ার পূর্বে সেই ব্যক্তির হালত যাচাই করা আবশ্যক। যদি কোন ব্যক্তির কাছে নগদ টাকা পয়সা অথবা স্বর্ণ রুপা অথবা ব্যাবসায়িক সম্পত্তি বলতে কিছুই না থাকে বা যদি এত অল্প পরিমানে থাকে, যেটা নেসাব পরিমান সম্পদের ( ৮৮ হাজার টাকার ) চাইতে কম : তাহলে এমন ব্যক্তির উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ না। কিন্তু যদি সেই একই ব্যক্তির মালিকানায় নিজের বসবাসের বাড়িঘর ছাড়াও অতিরিক্ত কোন জমি থাকে, যা অব্যাবহৃত বা অন্যের কাছে বন্ধক রাখা ; যার মুল্য নেসাব সমপরিমান মুল্যমানের হয় অথবা তার মালিকানায় বেশ কয়েক কাঠা/বিঘা জমি আছে: তাহলে যতটুকু সম্পত্তিতে চাষাবাদ করলে তার বছর চলে, অতটুকু বাদে বাকি সমস্ত জমির দাম যদি নেসাব সমপরিমান মুল্যমানের হয় তাহলেও এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না। তদ্রুপ তার কোন অতিরিক্ত বাড়ি আছে, যেটা অব্যাবহৃত বা বছরে ২/১ বার ব্যাবহার করা হয় অথবা ভাড়া দেয়া, অথবা বাড়িতে এমন বেশকিছু অব্যাবহৃত জিনিসপত্র আছে, যা বছরে একেবারেই তেমন ব্যাবহার করা হয় না : তাহলে এমন সমস্ত জিনিসের মুল্য যদি নেসাব সমপরিমান হয়, তাহলে এমন ব্যক্তিকেও যাকাত দেয়া যাবে না। এমন ব্যক্তির উপর সদক্বাতুল ফিতর দেয়া আবশ্যক অতএব আপনার যাকাত সঠিক, উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করুন। নতুবা যাকাত ভুল মানুষকে দিলে পুনরায় যাকাত আদায় করা আবশ্যক!
বিস্তারিত পড়ুন

সকল প্রসঙ্গ

২৭তম রজনী
অনলাইন কোর্স
অলিম্পিক
আংটি
আধুনিক মাসআলা
আধুনিক মাসাআলা
উম্মুল মু'মিনিন
ওকালতি
কাফফারা
কাযা
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস
ক্রিকেট
ক্রিপ্টোকারেন্সি
ক্র্যাকড
খেলাধুলা
খেলাধুলা হতে উপার্জন
জর্দা
ডাক্তারি বিদ্যা
ডিফেন্স ফোর্স
তামাক
তারাবীহ
তালাক
দোআ
দোয়া
নবীজি
নবুয়তের সিলমোহর
নেশা
নৌবাহিনী
পাইরেটেড
পার্লামেন্ট সদস্য
পুলিশ
পেইড কোর্স
ফিদিয়া
ফুটবল
বিচারপতি
বিটকয়েন
বিড়ি
বিডিআর
ব্যবসায়
ব্যাডমিন্টন
ব্যারিস্টার
মদ
মাকরুহ
মুনাজাত
মেডিকেল
যাকাত
যাকাত-ফিতরা
রাস্তায় পাওয়া জিনিস
রোজা
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজার মাসআলা
রোজার মাসাআলা
রোযা ভঙ্গের কারণ
র‍্যাব
লাইলাতুল ক্বদর
লাইলাতুল বারাআত
শবে ক্বদর
শবে বরাত
শিক্ষক
সফটওয়্যার
সংবিধান
সরকারি চাকরি
সহশিক্ষা
সামরিক বাহিনী
সিগারেট
সেনাবাহিনী
স্ত্রী

© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Facebook Group